মিয়া আবদুল হান্নান : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। এই রাষ্ট্রকে এখন সংস্কার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেমন এই দেশকে স্বাধীন করা হয়েছে। দেশকে নতুনভাবে পরিচালনা করার জন্য আবার সংস্কার প্রয়োজন। আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং দলের ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে সমাবেশ করছে বিএনপি।
আজ শনিবার (১৮ মার্চ) বেলা ২টায় নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ শুরু হয়। এতে প্রধান অতাথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা ১টা থেকে সমাবেশে অংশ নিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সমাবেশে দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তুলে এলাকা । রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছোট-ছোট মিছিল সমাবেশের স্থলে লোকে লোকারণ্য । তারা রাস্তায় ত্রিফল বিছিয়ে তার উপর বসেছেন এবং সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের উপর তৈরী মঞ্চে নেতৃবৃন্দ রয়েছেন । এদিকে ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতা কর্মীদের সমাবেশে উপস্থিতি দেখা গেছে। তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তুলেন ।
সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিদেশি গণমাধ্যমের তথ্য উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের অব্যাহত অনিয়ম ও দুর্নীতিতে উন্নয়নের ফানুস চুপসে গেছে আজ ১৮ মার্চ শনিবার ১০ দফা দাবিতে বিএনপির পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘টিআইবির এক প্রতিবেদন বলছে আমাদের বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ৭৪ ভাগের বেশি দুর্নীতি হয়েছে পুলিশে, পরে রয়েছে পাসপোর্ট অফিসে , বিআরটিএ সহ জায়গাজমির ভূমি সেবা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ঘুষ ছাড়া ভর্তি ও নিয়োগ হয় না। পিয়নের চাকরির জন্য ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ‘পশ্চিমা গণমাধ্যম ইকোনমিস্ট কিছুদিন আগেও বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলেছে। আর এখন তারা বলছে দুর্নীতির কারণে সরকারের উন্নয়নের ফানুস চুপসে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের পকেট কেটে লুট করে বিদেশে পাচার করছে। সেই খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। ব্যাংকখাত, শেয়ার মার্কেটসহ দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান আজ অর্থ লুট করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামীলীগ ও সরকারের লুটপাটের কারণে দেশের উন্নয়ন প্রজেক্টগুলো ব্যর্থ হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে গাজীপুর গেলে তিনঘণ্টা হাতে নিয়ে বের হবেন। আমার জীবনের অর্ধেকটা রাস্তায়, রাস্তার জ্যামেই কেটেছে।
পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়ক কেটে আবার পাতাল রেল করে টাকা নষ্ট করা হবে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । ব্যর্থ প্রকল্পগুলো সরিয়ে রাস্তা উন্মুক্তের দাবি জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। জ্বালানি তেল আমদানিতেও প্রচুর দুর্নীতি হচ্ছে। এলএনজি ও এলপিজি আমদানিতে সরকারের বড় বড় মানুষ জড়িত। সরকারি ক্রয়েও প্রচুর দুর্নীতি হচ্ছে অভিযোগ করে বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারি দুর্নীতির কারণে ব্যাংকের টাকা হাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লোপাট হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের কেলেঙ্কারি হয়েছে। এসবের মাধ্যমে দেশের জনগণের টাকা প্রবাসীদের ঘামের টাকা রেমিট্যান্স বৈদেশিক মুদ্রা নাই হয়ে যাচ্ছে। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী, মোশাররফ হোসেন খোকন, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, আক্তার হোসেন, মহানগর সদস্য অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সরদার, আকবর হোসেন নান্টু, আলাউদ্দিন সররকার টিপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভূইয়া, সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ, যুগ্ম-আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম আওয়াল, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জাকির হোসেন, জিল্লুর রহমান খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের দক্ষিণখানের মোতালেব হোসেন রতন, দেওয়ান মোঃ নাজিম উদ্দিন, মোহাম্মদপুরের এম এস আহমাদ আলী, বিমাবন্দরের দেলোয়ার হোসেন দিলু, তুরাগের হাজী জহিরুল ইসলাম, মিরপুরের আব্দুল মতিন, দেলোয়ার হোসেন দুলু, খিলক্ষেতের দেওয়ান ফরিদ, মিজানুর রহমান রেনু, রুপনগরের আলী আহমেদ রাজু, আদাবরের সাদেক হোসেন স্বাধীন, শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের চকবাজার থানার শহিদুল ইসলাম বাবুল, শফিকুল ইসলাম রাসেল, হুমায়ুন কবির, ডেমরা থানার মনির হোসেন খান, যাএাবাড়ীর জাহাঙ্গীর আলম, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা বিএনপির সভাপতি মনির হোসেন মিনু, সাধারণ সম্পাদক হাসমত উল্লাহ নবী, ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার এরফান ইবনে আমান অমি, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু প্রমুখ।
|