মানবসেবায় সাহাবিদের প্রতিযোগিতা
মিয়া আবদুল হান্নান : ইসলাম এতিম, অসহায়, বা দরিদ্র শিশুদের সাহায্য করতে, তাদের দায়িত্ব নিতে উৎসাহিত করে। কোরআনে ও হাদিসে বার বার এতিম শিশুদের সাহায্য করতে, আশ্রয় দিতে, তাদের জন্য ব্যয় করতে ও তাদের স্নেহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সদকা বা দান করার খাতসমূহের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, করার উপযুক্ত শ্রেণির বিষয়ে বলেন, তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দিন, তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করো তা পিতামাতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যে কোনো সৎকাজ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা জানেন। (সুরা বাকারা: ২১৫)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করো না। আর পিতামাতার প্রতি সদয় হও, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিকটবর্তী প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, পাশে থাকা সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদয় হও। (সুরা নিসা: ৩৬)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য পরিশ্রমকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো মর্যাদার অধিকারী। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
সাহল ইবনে সা’দ (রা.) হতে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি ও এতিমের প্রতিপালক জান্নাতে একসাথে থাকব। (সহিহ বুখারি)
আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি নবিজির (সা.) কাছে গিয়ে তার হৃদয়ের কঠোরতার বিষয়ে অভিযোগ করলেন। নবিজি (সা.) তাকে বললেন, আপনি কি চান আপনার হৃদয় কোমল হোক এবং আপনার প্রয়োজন পূরণ হোক? তবে এতিমের প্রতি দয়া করুন, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিন এবং তাকে নিজ খাবার থেকে খাওয়ান। এতে আপনার হৃদয় কোমল হবে এবং আপনার প্রয়োজন পূরণ হবে। (তাবরানি)
এতিমদের প্রতিপালন ও তাদের প্রতি দয়া করার ফজিলত সম্বলিত আরও বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে।
সাহাবায়ে কেরাম এতিমদের লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হতো। একজন এতিমের দায়িত্ব নিতে দুই/তিনজন সাহাবি এগিয়ে আসতেন।
যেমন বর্ণিত রয়েছে, ওহুদ যুদ্ধে শহিদ হজরত হামজার (রা.) এতিম মেয়ে উমামার প্রতিপালনের দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে তিনজন সাহাবি তার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়েছিলেন।
নবিজি (সা.) তখন ওমরাহ পালন করতে মদিনা থেকে মক্কায় গিয়েছিলেন। একদিন উমামা তাকে ‘চাচা’ বলে ডাকতে ডাকতে তার কাছে ছুটে আসে। আলী (রা.) শিশুটিকে কোলে তুলে নেন এবং বলেন তিনিই এই শিশুর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবেন। আলী (রা.) বলেন, তিনি উমামার চাচাতো ভাই এবং তিনিই প্রথম তাঁকে কোলে নিয়েছেন, তাই তার দায়িত্ব তাকেই দেওয়া হোক।
জাফর ইবনে আবি তালিবও (রা.) তার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, তিনি উমামারও চাচাতো ভাই এবং তাঁর স্ত্রী উমামার খালা। খালা যেহেতু মায়ের মতো, তাই এই এতিম শিশুটি তার ঘরেই বেশি আদর-যত্নে থাকবে।
জায়েদ ইবনে হারিসাও (রা.) তার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, উমামা আমার ভাইয়ের মেয়ে, যেহেতু তিনি ও হামজা (রা.) দুধ-ভাই ছিলেন।
আল্লাহর রাসুল (সা.) তিনজনের বক্তব্য শুনে উমামার লালন-পালনের দায়িত্ব জাফরকে (রা.) দেন এবং বলেন, খালা মায়ের মতো।
নবিজি (সা.) আলী (রা.) ও জায়দকেও (রা.) উৎসাহ দেন, নেক কাজে আগ্রহের জন্য তাদের প্রশংসা করেন।
সূত্র: মিরকাতুল মাফাতিহ, আল-বাদরুত তামাম
|
মিয়া আবদুল হান্নান : ইসলাম এতিম, অসহায়, বা দরিদ্র শিশুদের সাহায্য করতে, তাদের দায়িত্ব নিতে উৎসাহিত করে। কোরআনে ও হাদিসে বার বার এতিম শিশুদের সাহায্য করতে, আশ্রয় দিতে, তাদের জন্য ব্যয় করতে ও তাদের স্নেহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সদকা বা দান করার খাতসমূহের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, করার উপযুক্ত শ্রেণির বিষয়ে বলেন, তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বলে দিন, তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করো তা পিতামাতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যে কোনো সৎকাজ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা জানেন। (সুরা বাকারা: ২১৫)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করো না। আর পিতামাতার প্রতি সদয় হও, নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিকটবর্তী প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, পাশে থাকা সঙ্গী, মুসাফির এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদয় হও। (সুরা নিসা: ৩৬)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য পরিশ্রমকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মতো মর্যাদার অধিকারী। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
সাহল ইবনে সা’দ (রা.) হতে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি ও এতিমের প্রতিপালক জান্নাতে একসাথে থাকব। (সহিহ বুখারি)
আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি নবিজির (সা.) কাছে গিয়ে তার হৃদয়ের কঠোরতার বিষয়ে অভিযোগ করলেন। নবিজি (সা.) তাকে বললেন, আপনি কি চান আপনার হৃদয় কোমল হোক এবং আপনার প্রয়োজন পূরণ হোক? তবে এতিমের প্রতি দয়া করুন, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিন এবং তাকে নিজ খাবার থেকে খাওয়ান। এতে আপনার হৃদয় কোমল হবে এবং আপনার প্রয়োজন পূরণ হবে। (তাবরানি)
এতিমদের প্রতিপালন ও তাদের প্রতি দয়া করার ফজিলত সম্বলিত আরও বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে।
সাহাবায়ে কেরাম এতিমদের লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হতো। একজন এতিমের দায়িত্ব নিতে দুই/তিনজন সাহাবি এগিয়ে আসতেন।
যেমন বর্ণিত রয়েছে, ওহুদ যুদ্ধে শহিদ হজরত হামজার (রা.) এতিম মেয়ে উমামার প্রতিপালনের দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে তিনজন সাহাবি তার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়েছিলেন।
নবিজি (সা.) তখন ওমরাহ পালন করতে মদিনা থেকে মক্কায় গিয়েছিলেন। একদিন উমামা তাকে ‘চাচা’ বলে ডাকতে ডাকতে তার কাছে ছুটে আসে। আলী (রা.) শিশুটিকে কোলে তুলে নেন এবং বলেন তিনিই এই শিশুর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবেন। আলী (রা.) বলেন, তিনি উমামার চাচাতো ভাই এবং তিনিই প্রথম তাঁকে কোলে নিয়েছেন, তাই তার দায়িত্ব তাকেই দেওয়া হোক।
জাফর ইবনে আবি তালিবও (রা.) তার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, তিনি উমামারও চাচাতো ভাই এবং তাঁর স্ত্রী উমামার খালা। খালা যেহেতু মায়ের মতো, তাই এই এতিম শিশুটি তার ঘরেই বেশি আদর-যত্নে থাকবে।
জায়েদ ইবনে হারিসাও (রা.) তার দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, উমামা আমার ভাইয়ের মেয়ে, যেহেতু তিনি ও হামজা (রা.) দুধ-ভাই ছিলেন।
আল্লাহর রাসুল (সা.) তিনজনের বক্তব্য শুনে উমামার লালন-পালনের দায়িত্ব জাফরকে (রা.) দেন এবং বলেন, খালা মায়ের মতো।
নবিজি (সা.) আলী (রা.) ও জায়দকেও (রা.) উৎসাহ দেন, নেক কাজে আগ্রহের জন্য তাদের প্রশংসা করেন।
সূত্র: মিরকাতুল মাফাতিহ, আল-বাদরুত তামাম
|
|
|
|
ধর্ম ডেস্ক : মসজিদুল আকসায় কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি জোহর নামাজ আদায় করেছেন। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) তারা আল আকসায় জোহর নামাজ আদায় করেন। এ দিন তার আল আকসার প্রশস্ত প্রাঙ্গণে মেরাজের স্মরণে আলোচনা সভা করেছেন।
মসজিদে ভেতরে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও ইমামরা অংশ নিয়েছেন। প্রতি বছর রজব মাসের ২৭ তারিখকে মেরাজের ঘটনা স্মরণ করার জন্য নির্ধারণ করেছে ফিলিস্তিনের ফতোয়া বোর্ড। এই সময় অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের পক্ষ থেকে মসজিদুল আকাসায় হামলা করা হয় না।
এ সময় জারুজালেম, ও আশপাশ থেকে আাসা পরিবারগুলো মসজিদের সীমানার বাইরে মূল প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন, শিশুরা খেলায় মেতে উঠে। ইসরা বলা হয়, ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা.-এর মক্কা থেকে মসজিদুল আকসার সফরকে। আর মেরাজ বলা হয়, বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সাত আসমান পর্যন্ত রাসূল সা.-এর ঊর্ধ্বলোকের ভ্রমণকে। মেরাজের ঘটনা হিজরতের আগে সংঘটিত হয়েছিল। তবে এর সঠিক তারিখ নিয়ে আলেমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।
সোমবার সহস্রাধিক মুসল্লি মসজিদুল আকসায় জোহরের নামাজ আদায় করেছেন।
মসজিদুল আকসা প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতি।
শবে মেরাজ উপলক্ষে ফিলিস্তিনে সরকারী ছুটি পালন করা হয়।
কুব্বাতুস সাখরা থেকে রাসূল সা. ঊর্ধ্ব ভ্রমণ শুরু করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
সোমবার মেরাজের স্মরণে আল আকসা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছিলেন ফিলিস্তিনিরা। খেলায় মেতে উঠেছে শিশুরা।
|
|
|
|
নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা করা হবে। সে হিসাবে আজ ২৭ জানুয়ারি দিনগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।
বুধবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
সভায় সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায়-বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
এমতাবস্থায় বৃহস্পতিবার থেকে ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাস গণনা শুরু হবে। এছাড়া আগামী ২৭ জানুয়ারি দিনগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : আল্লাহর তাআলার দয়া ও তওফিক ছাড়া কেউ হেদায়াত লাভ করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা দয়া করে যাদেরকে ইচ্ছা সঠিক পথ প্রদর্শন করেন, সঠিক পথে অবিচল থাকার তওফিক দান করেন, আবার অনেককে আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট করেন অর্থাৎ তারা নিজেদের দম্ভ, অহমিকা জুলুম ও পাপাচারের কারণে আল্লাহর অনুগ্রহ ও হেদায়াতের তওফিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আমি প্রত্যেক রাসুলকে তার জাতির ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে বর্ণনা দেয়; তারপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সুরা ইবরাহিম: ৪)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
আল্লাহ যাকে হেদায়াত করতে চান তার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করতে চান তার বক্ষকে সংকীর্ণ-সংকুচিত করে দেন; যেন সে আকাশে-ঊর্ধ্বে আরোহণ করছে। এভাবেই আল্লাহ অকল্যাণ দেন তাদের উপর যারা ইমান আনে না। (সুরা আনআম: ১২৫)
তাই আল্লাহ তাআলার কাছে সব সময় হেদায়াত এবং হেদায়াতের ওপর অবিচলতার জন্য দোয়া করা উচিত, পথভ্রষ্টতা থেকে আশ্রয়ের জন্য দোয়া করা উচিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা দ্বীনের ওপর অবিচলতা ও পথভ্রষ্টতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে আমাদের দোয়া করতে শিখিয়েছেন,
হে আমাদের রব, আপনি হেদায়াত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা আলে ইমরান: ৮)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) (পথভ্রষ্টতা থেকে আশ্রয় চেয়ে) দোয়া করতেন,
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে নিজেকে সমর্পণ করলাম, আপনার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম, ভরসা করলাম এবং আপনারই দিকে নিজেকে ফেরালাম এবং আপনারই সাহায্যে লড়াই করলাম। হে আল্লাহ! আমি পথভ্রষ্টতা থেকে আপনার মর্যাদার আশ্রয় গ্রহণ করছি। আপনি ছাড়া সত্য আর কোনো মাবুদ নেই, আপনি চিরঞ্জীব, আপনি মৃত্যুবরণ করবেন না, মৃত্যুবরণ করবে মানুষ ও জিন। (সহিহ বুখারি: ৭৩৮৩, সহিহ মুসলিম: ২৭১৭)
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : জুমার দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল করে মসজিদে গিয়ে উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায় অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। এ আমলে সওয়াব লাভ হওয়ায় পাশাপাশি পূর্ববর্তী জুমা পর্যন্ত গুনাহও মাফ হয়ে যায়। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৯১০)
এ হাদিসে জুমা আদায়ের এই অপরিসীম ফজিলত লাভের শর্ত হিসেবে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ৬টি করণীয় ও ২টি বর্জনীয় কাজের কথাও বলেছেন। করণীয় কাজগুলো হলো,
১. জুমার নামাজের প্রস্তুতি হিসেবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ভালোভাবে গোসল করুন।
২. দাঁত ব্রাশ/ মিসওয়াক করুন, সম্ভব হলে সুগন্ধী ব্যবহার করুন এবং উত্তম পোশাক পরিধান করুন।
৩. জুমার নামাজের জন্য দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করুন। ইমাম খুতবা শুরু করার আগে অবশ্যই মসজিদে উপস্থিত হোন।
৪. ইমাম খুতবা শুরু করার আগে মসজিদে পৌঁছতে পারলে তাহিয়াতুল মসজিদ বা দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করুন।
৫. খুতবা শুরু হলে মনযোগ দিয়ে খুতবা শুনুন।
৬. উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায় করুন।
বর্জনীয় ২টি কাজ হলো ১. মসজিদে গিয়ে অন্যদের কষ্ট দিয়ে কাতার ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবেন না। জুমার দিন ইমামের কাছাকাছি বসার আগ্রহ ও চেষ্টা থাকা উচিত। কিন্তু সেজন্য আগে আগে মসজিদে উপস্থিত হতে হবে। মসজিদে পরে উপস্থিত হয়ে অন্য মুসল্লিদের ডিঙিয়ে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না।
২. খুতবার সময় কথা বলবেন না। মনযোগ দিয়ে খুতবা শুনুন। অন্য কাউকে চুপ থাকতে বলার প্রয়োজন হলেও ইশারায় বলুন, আওয়াজ করে নয়।
এই সহজ নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মনে রেখে পালন করলে আশা করা যায় আমরা জুমা আদায়ের অপরিসীম ফজিলত লাভ করবো। আল্লাহর আমাদের সওয়াব দান করবেন এবং পূর্ববর্তী সপ্তাহের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : টুপি পরিধান করা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে টুপি পরেছেন। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে-তাবেইন এবং পরবর্তীসময়ে সব যুগে মুসলমানদের মধ্যে টুপি পরার আমলের ধারাবাহিকতা চলে আসছে।
হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত, একজন সাহাবি বলেছেন, আমি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে তার দস্তরখানে খেয়েছি এবং তার মাথায় সাদা টুপি দেখেছি। (আল ইসাবা: ৪/৩৩৯)
সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ বলেন, আমি প্রথম সারির মুহাজিরগণকে দেখেছি তারা সুতির পাগড়ি পরিধান করতেন। কালো, সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি রংয়ের। তারা পাগড়ির কাপড় মাথায় রেখে তার উপর টুপি রাখতেন। অতপর তার উপর পাগড়ি ঘুরিয়ে পরতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ১২/৫৪৫)
নামাজ আদায়ের সময়ও টুপি পরিধান করা সুন্নত। তবে এটা ওয়াজিব বা অপরিহার্য নয়। টুপি ছাড়া নামাজ আদায় করলেও নামাজ হয়ে যাবে। কিন্তু নিছক অলসতার কারণে খালি মাথায় নামাজ আদায় করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়।
নামাজের সময় মাথা থেকে টুপি পরে গেলে কী করবো? নামাজের মধ্যে মাথা থেকে টুপি পরে গেলে যদি এক হাত দিয়ে তা উঠিয়ে পরে নেওয়া সম্ভব হয় তাহলে টুপি উঠিয়ে পরে নেওয়াই উত্তম। আর যদি দুই হাত ব্যবহার করা ছাড়া ওঠানো সম্ভব না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে টুপি না ওঠানোই উচিত।
কারণ টুপি ওঠাতে গিয়ে ‘আমলে কাসির’ বা বেশি কাজ হয়ে গেলে নামাজ ভেঙে যেতে পারে। ফুকাহায়ে কেরামের পরিভাষায় ‘আমলে কাসির’ বলা হয়, নামাজে এমন নড়াচড়া বা কাজকে যে নড়াচড়া বা কাজের কারণে তাকে দেখে নামাজরত নয় বলে ধারণা হয়। নামাজে ‘আমলে কাসির’ করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
নামাজরত অবস্থায় মাথা থেকে টুপি পরে যাওয়ার পর টুপি ওঠানোর জন্য কেউ যদি আমলে কাসির করে অর্থাৎ সময় নিয়ে দুই হাত এমনভাবে ব্যবহার করে টুপি পরিধান করে যে তাকে দেখে মনে হয় সে নামাজ পড়ছে না, তাহলে তার নামাজ ভেঙে যাবে। তাই টুপি ওঠানোর জন্য যেন আমলে কারিস না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
দাঁড়ানো বা রুকু অবস্থায় মাথা থেকে টুপি পরে গেলে তা ওঠানোর চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু এ অবস্থায় আমলে কাসির না করে টুপি ওঠানো অসম্ভব। সিজদা বা বৈঠকের সময় টুপি পরে গেলে এক হাত দিয়ে উঠিয়ে পড়ে নেবে।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : আমাদের জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত সম্ভাবনাময়। প্রতিটি নতুন দিন আমাদের জীবনে নিজের জীবনকে আরও ভালো করার, নতুন নতুন কল্যাণকর কাজ করার সুযোগ নিয়ে আসে। অতীত ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করার, গুনাহ থেকে তওবা করার সুযোগ নিয়ে আসে। জাহান্নামের পথ থেকে সরে এসে জান্নাতের পথে চলার সুযোগ নিয়ে আসে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত সীমাহীন। বান্দা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যতো ভুল-ত্রুটি করুক, যতো বড় ও গুরুতর পাপে লিপ্ত হোক, আল্লাহ তাআলা তওবার দরজা খুলে রাখেন।
তওবা মানে ফিরে আসা; সঠিক পথে ফিরে আসা, আল্লাহর পথে ফিরে আসা, জান্নাতের পথে ফিরে আসা। মানুষ যখন গুনাহ করে, আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, তখন সে জাহান্নামের পথে এগিয়ে যায়। গুনাহের জন্য অনুশোচিত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে আল্লাহর পথে ফিরলে বান্দার জন্য রয়েছে ক্ষমা ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ বলেন,
আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তার বিপথগামী বান্দাদের আহ্বান জানাচ্ছেন তার রহমত ও মাগফেরাতের দিকে ছুটে আসতে বা তওবা করতে। যে তওবা করবে সে আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভ করবে যা আল্লাহ নেক ও পরহেজগার বান্দাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
কোরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইস্তেগফার বা তওবা করলে রিজিক বৃদ্ধি, উত্তম প্রাকৃতিক পরিবেশ, সম্পদ ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুনিয়ার সুখ সমৃদ্ধি দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহর নবি নুহের (আ.) ভাষায় আল্লাহ বলেছেন,
আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা। (সুরা নুহ: ১০-১২)
অর্থাৎ ইস্তিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে পরকালের নেয়ামত তো রয়েছেই, দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহ বরকত দান করবেন। দুনিয়ার সুখ-সমৃদ্ধি, ধন-সম্পদ ও উত্তম সন্তান-সন্ততি দান করবেন।
নতুন বছরের সূচনায় আসুন আমরা অতীতের গুনাহগুলো থেকে তওবা করি। আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত নিয়ে নতুন জীবন শুরু করি। জাহান্নামের পথ ছেড়ে জান্নাতের পথে চলি। আল্লাহ যে নতুন সম্ভাবনা আমাদের দান করেছেন তার সদ্ব্যাবহার করি। আল্লাহ তাআলা তওফিক দান করুন!
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : কোরআনের একটি সুরার নাম সুরা ‘মুতাফফিফীন’। শব্দটি ‘মুতাফফিফ’ শব্দের বহুবচন, অর্থ ওজনে কম দেয় এমন ব্যক্তি। এ সুরাটি শুরু হয়েছে ওজনে কম দেয় এমন ব্যক্তিদের শাস্তির ঘোষণা দিয়ে। আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়’। এ থেকে বোঝা যায় ইসলামে এটি কত গুরুতর গুনাহ এবং ‘মুতাফফিফ’ বা ওজনে কম দেওয়া ব্যবসায়ীরা কত নিকৃষ্ট ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
মন্দ পরিণাম তাদের জন্যে যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদেরকে মেপে বা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে। সেই মহাদিবসে, যেদিন মানুষ দাঁড়াবে জগৎসমূহের রবের সামনে। (সুরা মুতাফফিন: ১-৬)
ওজনে হেরফের করতে নিষেধ করে আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
তোমরা ইনসাফের সাথে ওজন ঠিক রাখ এবং পরিমাপে কম দিয়ো না। (সুরা আর-রাহমান: ৯)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
পরিমান-ওজন সঠিকভাবে করবে, আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব দেই না। (সুরা আনআম: ১৫২)
আল্লাহর একজন নবি হজরত শোয়াইব (আ.) যার নাম কোরআনে বার বার এসেছে, তার জাতির ব্যবসায়ী বা বিক্রেতাদের ওজনে কম দেওয়ার অভ্যাস ছিল। কোরআনে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ তাআলার নির্দেশে শোয়াইব (আ.) তার জাতিকে এক আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তাদেরকে এই গর্হিত গুনাহ ত্যাগ করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আমি মাদইয়ানবাসীর কাছে তাদেরই ভাই শেয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন মাবুদ নেই। তোমাদের রবের পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলিল এসে গেছে। সুতরাং তোমরা পরিমাণে ও ওজনে পরিপূর্ণ দাও, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবেনা। আর দুনিয়ায় শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনের পর ঝগড়া ফাসাদ ও বিপর্যয় ঘটাবেনা, তোমরা বাস্তবিক পক্ষে ইমানদার হলে এই পথই হল তোমাদের জন্য কল্যাণকর। (সুরা আরাফ: ৮৫)
কোরআনের আরও কয়েক জায়গায় আল্লাহ তাআলা নবি শোয়াইবের (আ.) দাওয়াতের কথা বলেছেন এবং তার জাতিকে ওজনে হেরফের করতে নিষেধ করার কথাও উল্লেখ করেছেন।
হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওজনে কম দেওয়ার ফলে দুনিয়াতেই আল্লাহর শাস্তি ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কম দেয়, তখন তাদের ওপর দুর্ভিক্ষ নেমে আসে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায় আর তাদের ওপর জালেম শাসক চাপিয়ে দেওয়া হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)
মুসলমানদের একটি আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য সততা ও সত্যবাদিতা; সত্য বলা, সত্য সাক্ষ্য দেওয়া, সত্য প্রতিষ্ঠা করা, সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে থাকা। ধোঁকা, প্রতারণা, ভাণ ও ভণ্ডামি থেকে দূরে থাকা। ওজনে কম দিয়ে ক্রেতার সাথে প্রতারণা যে ব্যবসায়ী বা বিক্রেতারা করে, তারা কখনও আদর্শ মুমিন হতে পারে না।
মিথ্যা, ধোঁকা ও প্রতারণা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মুনাফিকরা নিজেদের বিশ্বাসের ব্যাপারে যেমন অসত্য কথা বলে, প্রতারণা করে, অন্যান্য ক্ষেত্রেও মিথ্যাই তাদের স্বভাব। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি; কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা খেলাপ করে এবং আমানত রাখা হলে তাতে খেয়ানত করে। (সহিহ বুখারি: ৩৩)
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : মুসলমানদের জন্য জুমার দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা: ৮৩)
জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদার অন্যতম কারণ হলো, এ দিন সৃষ্টিকুলের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে ও ঘটবে। এভাবেও বলা যায় যে জুমার দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে আল্লাহ জুমার দিনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন এবং আরও কিছু কাজের জন্য এ দিনটিকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। একটি হাদিসে জুমার দিন ঘটিত ও ঘটিতব্য পাঁচটি বিশেষ ঘটনার কথা উল্লেখ করে নবিজি (সা.) বলেন, জুমার দিন দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। জুমার দিন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে মহান দিন। এ দিন আল্লাহ তাআলার কাছে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর তথা ইসলামের দুই ঈদের দিন থেকেও মহান। জুমার দিনের বিশেষ পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ দিন আল্লাহ তাআলা আদমকে (আ.) সৃষ্টি করেছেন। এ দিনই তাকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এ দিনই আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিয়েছেন। জুমার দিন একটা সময় আছে, যে সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাআলা তাকে তা-ই দান করবেন, যদি না সে হারাম কোনো কিছু প্রার্থনা করে। কেয়ামতও সংঘটিত হবে জুমার দিন। জুমার দিন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা কেয়ামতের আশঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকেন। উদ্বিগ্ন থাকে পৃথিবী, আকাশ, বাতাস, পাহাড়, পর্বত, সাগর সবকিছু। (মুসনাদে আহমাদ: ১৫৫৪৮, সুনানে ইবনে মাজা: ১০৮৪১)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এ দিন আল্লাহ তাআলা আদমকে (আ.) সৃষ্টি করেছেন। তাকে দুনিয়াতে নামানো হয়েছে এ দিন। তার মৃত্যুও হয়েছে এ দিন। তার তাওবা কবুল হয়েছে এ দিন। এ দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। মানুষ ও জিন ছাড়া এমন কোনো প্রাণী নেই, যা কেয়ামত কায়েম হওয়ার ভয়ে জুমার দিন ভোর থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত চিৎকার করতে থাকে না। জুমার দিন একটা সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি সে সময় নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১০৪৬, সুনানে নাসাঈ: ১৪৩০)
অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এ দিনটিকে মুসলমানদের বিশেষ দিন হিসেবে নির্ধারণ করে আল্লাহ মুসলমানদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমরা সর্বশেষ উম্মাত কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা হব অগ্রগামী। যদিও সব উম্মতকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের আগে, আর আমাদের কিতাব দেয়া হয়েছে সকল উম্মাতের শেষে। যে দিনটি আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, সে দিন সম্পর্কে তিনি আমাদের হিদায়াতও দান করেছেন। সে দিনের ব্যাপারে অন্যান্যরা আমাদের পিছনে রয়েছে, (যেমন) ইহুদিরা (আমাদের) পরের দিন (শনিবার) এবং খৃষ্টানরা তাদেরও পরেন দিন। (রবিবার) (সহিহ মুসলিম: ১৮৬৩)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, পূর্ববর্তী আহলে কিতাবরা মতানৈক্যের কারণে এ শ্রেষ্ঠ দিন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাদের বিশেষ দিন হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে শনিবার ও রবিবার। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমাদের আগমন সবার শেষে। কিন্তু আমরা কিয়ামতের দিবসে থাকব সবার প্রথমে। আমরা জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে অগ্রগামী থাকব। তবে তাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে তাদের পর। তারা মতবিরোধ করেছে, আর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেই সত্যের হিদায়াত দিয়েছেন যা নিয়ে তারা মতভেদ করেছে। এটাই সেই দিন— যে সম্পর্কে তারা মতবিরোধ করেছে এবং আল্লাহ আমাদেরকে এ ব্যাপারে হেদায়াত করেছেন। আমাদের বিশেষ দিন জুমার দিন। ইহুদিদের পরের দিন, খৃষ্টানদের তার পরের দিন। (সহিহ মুসলিম: ১৮৫৩)
|
|
|
|
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে ৫ দিনের জোড় ইজতেমার অনুমতি ও মাওলানা সাদকে আসার নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবিতে সচেতন ছাত্রসমাজের ব্যানারে গাজীপুর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন সাদপন্থিরা।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে জিএমপির সদর দপ্তরের সামনে এ ধর্মঘট শুরু হয়। ধর্মঘট চলাকালে বক্তারা বলেন, জুলাই ২৪ বিপ্লবে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের এক মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী ‘সচেতন ছাত্রসমাজ’ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের মতো একজন বিশ্ববরেণ্য ও সমাদৃত ব্যক্তির নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং সব ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে। দীর্ঘদিন থেকে আমরা সচেতন ছাত্রসমাজ নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করছি যে, তাবলিগ জামাতের দুপক্ষের ভেতরে একটা সুস্পষ্ট বিভেদ দেখা যাচ্ছে এবং এর ফলশ্রুতিতে দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তাবলিগের অপরপক্ষ প্রতি বছর তাদের সর্বোচ্চ মুরুব্বিদের নিয়ে জোড় ও ইজতেমা করার সুযোগ পাচ্ছে। এই বছরও তারা টঙ্গীর ময়দানে তাদের সব মুরুব্বিদের (ভারত ও পাকিস্তান) নিয়ে পাঁচ দিনের জোড় করেছে। ন্যায্যতা ও ইনসাফের দাবি অনুসারে আমরা মাওলানা সাদসহ সর্বোচ্চ মুরুব্বিকে বাংলাদেশে এনে ২০-২৪ ডিসেম্বর ৫ দিনের জোড় করার দাবি জানাচ্ছি। ন্যায্যতা ও ইনসাফ হিসেবে এ ব্যাপারটি নিয়ে আর কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা আমরা সচেতন ছাত্রসমাজ দেখতে চাই না। আমরা বৈষম্য দূরীকরণ, দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার জোরালো দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায়, আগামী মঙ্গলবার সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক সচেতন ছাত্র প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : আজকের সিরিয়া, জর্দান, লেবানন ও পূর্ণ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে প্রাচীনকালে ‘শাম দেশ’ বলা হতো। শাম মূলত নবী-রাসুলদের ভূখণ্ড।
কোরআন-হাদিসের একাধিক জায়গায় এর ফজিলতের কথা এসেছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যাদের দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকেও আমি উত্তরাধিকার দান করেছি, এই ভূখণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের যাতে আমি বরকত সন্নিহিত রেখেছি। ’ (সুরা : আরাফ, আাায়াত : ১৩৭) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা এর বরকত সম্পর্কে বলেন, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনকারী। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১)
সব মুফাসসিরিন একমত, উল্লিখিত আয়াতে ‘পবিত্র ভূমি’ এবং ‘বরকতময় ভূমি’ দ্বারা শামের ভূমিই উদ্দেশ্য।
আর আয়াতে বরকত দ্বারা কেউ বেলেছেন, এখানে দুনিয়াবি বরকত উদ্দেশ্য। যেমন—এই পবিত্র ভূখণ্ড সর্বদা অধিক পরিমাণে আহার্য, ফলমূল, নদী-নালা, খাদ্যশস্য ও রিজিকের প্রশস্ততায় পরিপূর্ণ থাকবে। আর কেউ বলেছেন, এখানে বরকত দ্বারা দ্বিনের বরকতে ধন্য হওয়া উদ্দেশ্য। কারণ এখানে বহুসংখ্যক নবী-রাসুল বসবাস করেছেন, এখানেই ফেরেশতারা তাদের কাছে আসমানি ওহি নিয়ে অবতরণ করেছেন।
তবে বিশুদ্ধ মত হলো, এখানে দ্বিন-দুনিয়া উভয় দিকের বরকতই রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম (সা.) শামের জন্য দোয়া করে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের শাম দেশে ও ইয়েমেনে বরকত দান করুন। ’ (বুখারি, হা: ১০৩৭)
তা ছাড়া বরকতময় এই ভূমিকে আল্লাহ তাআলা অনেক মর্যাদা দান করেছেন। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
১) শাম হবে হাশরের ময়দান
ইমাম কুরতুবি, ইবনে কাসির ও ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, শাম হলো হাশরের ভূমি। প্রথমবার ইহুদিদের শামে বহিষ্কার করার দ্বারা প্রথম হাশর সংঘটিত হয়েছে।
আর দ্বিতীয়বার সেখানেই সমগ্র মানবজাতির জন্য হাশরের ময়দান হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, হাকিম বিন মুয়াবিয়া (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সেখানেই তোমাদের হাশর হবে (তোমরা একত্র হবে)। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। তখন লোকেরা আরোহী, পদাতিক ও অধঃমুখী এই তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ইবনে বুকাইর (রহ.) বলেন, সেখানেই তোমাদের হাশর হবে বলার সময় তিনি শাম দেশের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। (মুসনাদে আহমদ : ৩৩/২১৪)
২) ফেরেশতারা নিজের ডানাকে এ দেশে ছড়িয়ে দেন
ফেরেশতারা শামের ওপর নিজের ডানা দিয়ে আবৃত করে রাখেন, যা এই ভূখণ্ডের মাহাত্ম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। জায়েদ বিন সাবেত (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, শামের জন্য সৌভাগ্য, শামের জন্য মারহাবা! আমি বললাম, শামের জন্যই কেন? তিনি উত্তর দিলেন, ফেরেশতারা শামের ওপর নিজের ডানা ছড়িয়ে দেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯৫৪)
৩) শাম ও তার অধিবাসীদের দায়িত্ব নিয়েছেন আল্লাহ
ইবনু হাওয়ালা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শিগগিরই ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, যখন জিহাদের জন্য তিনটি সেনা দল গঠিত হবে—সিরিয়ার সেনাবাহিনী, ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ও ইরাকের সেনাবাহিনী। ইবনু হাওয়ালা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি সেই যুগ পেলে আমার জন্য কোন দলের সঙ্গী হওয়া মঙ্গলজনক মনে করেন? তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। কেননা তখন এই এলাকাই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম গণ্য হবে। আল্লাহ তার সত্কর্মশীল বান্দাদের এখানে একত্র করবেন। আর তুমি সিরিয়া যেতে রাজি না হলে অবশ্যই ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর সঙ্গী হবে। তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের কূপগুলো থেকে পানি উত্তোলন করো। কেননা মহান আল্লাহ আমার অসিলায় সিরিয়া ও এর অধিবাসীদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৮৩)
৪) কোরআন ও ইসলামের ঘাঁটি হবে শাম
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি (দিব্যদৃষ্টি বা স্বপ্নে) দেখলাম যে কিতাবুল্লাহকে আমার বালিশের নিচ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। অতঃপর আমি স্পষ্টরূপে দেখলাম যে তা যেন এক উজ্জ্বল আলোতে রূপান্তরিত হলো, যার উৎস শাম থেকে। জেনে রেখো! যখন ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে তখন ঈমান শামেই অবস্থান করবে এবং কিতাবুল্লাহ এবং ইসলামের মজবুত ঘাঁটিও সেখানেই থাকবে। আর শামবাসীরা তার হেফাজতে অবিচল থাকবে (মুসতারকে হাকিম : ৫/৭১২-১১৩)
৫) আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত দল শামে অবস্থান করবে
নবী করিম (সা.)-এর বর্ণিত সাহায্যপ্রাপ্ত বিজয়ী দলটি শামেই অবস্থান করবে। মুআবিয়া ইবনু কুররা (রহ.) তার বাবা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শামবাসীরা খারাপ হয়ে যাবে তখন তোমাদের আর কোনো কল্যাণ থাকবে না। তবে আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সব সময়ই সাহায্যপ্রাপ্ত (বিজয়ী) থাকবে। যেসব লোক তাদের অপমানিত করতে চায় তারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। (তিরমিজি, হা: ২১৯২)
অন্য হাদিসে এসেছে, সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পশ্চিম দেশীয়রা বরাবর হকের ওপর বিজয়ী থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৫২)
ইমাম নববী পশ্চিম দেশীয়ের ব্যাখ্যা করেছেন, আরব বা শামবাসী। (মুখতাসারু শরহে মুসলিম : ৫/১৮৫ )
ইমাম আহমদ ও শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এই মতটি সমর্থন করেছেন।
৬) শামে অবস্থানের জন্য নবীজির অসিয়ত
নবী করিম (সা.) তার উম্মতকে শামে অবস্থানের জন্য অসিয়ত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের আগে হাজরামাউত সাগর বা এলাকা থেকে আগুন বের হয়ে মানুষকে এক জায়গায় একত্র করবে। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাহলে তখন আমাদের প্রতি আপনার নির্দেশ কী? তিনি বললেন, তখন শামের ভূমিকে আঁকড়ে ধরবে। (মুসনাদে আহমদ : ৯/১৪৫)
৭) সর্বোত্তম আবাসভূমি শাম
নবী করিম (সা.) শামের প্রশংসা করেছেন এবং তাকে সর্বোত্তম আবাসভূমি বলে আখ্যা দিয়েছেন। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যুদ্ধের দিন মুসলিমদের শিবির স্থাপন করা হবে ‘গূতা’ নামক শহরে, যা সিরিয়ার সর্বোত্তম শহর দামেস্কের পাশে অবস্থিত। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৯৮)
৮) কিয়ামত-পূর্ব ঈসা নবীর অবতরণের স্থান হবে শাম
ইসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর অবতরণের স্থান হলো শাম। নাওয়াস বিন সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ঈসা ইবনে মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন। তিনি দুজন ফেরেশতার কাঁধের ওপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রঙের জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেস্ক নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭২৬৩)
৯) আল্লাহর শত্রু দাজ্জালকে হত্যা করা হবে শামেই
শামেই ঈসা (আ.)-এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। হাদিস শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, যখন মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হতে শুরু করা মাত্র সালাতের সময় হবে। অতঃপর ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন এবং সালাতে তাদের ইমামতি করবেন। আল্লাহর শত্রু (দাজ্জাল) তাকে দেখামাত্রই বিচলিত হয়ে যাবে, যেমন—লবণ পানিতে মিশে যায়। যদি ঈসা (আ.) তাকে এমনিই ছেড়ে দেন তবে সে-ও নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ তাআলা ঈসা (আ.)-এর হাতে তাকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ঈসা (আ.)-এর বর্শায় তিনি তাদের দেখিয়ে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭১৭০)
১০) খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান শাম
খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান হলো শামের পবিত্র ভূমি। সালামা বিন নুফাইল (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, জেনে রেখো! মুমিনদের বাসভূমির উৎস হবে শাম। (মুসনাদে আহমদ : ২৮/১৬৫)
১১) কিয়ামত-পূর্ব শাম হবে নিরাপদ ও ফিতনামুক্ত
কিয়ামত-পূর্ব শাম নিরাপদ ও ফিতনামুক্ত থাকবে। ইমাম ইবনে আসির (রহ.) বলেন, ইসলামের মূল উৎস হবে শাম। যেন রাসুলুল্লাহ (সা.) ফিতনার যুগের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। অর্থাৎ শাম তখনো নিরাপদ থাকবে এবং মুসলিমরা সেখানে ফিতনামুক্ত থাকবে।
(আন-নিহায়া ফি গরিবিল, হাদিস : ৩/২৭১)
|
|
|
|
আজকের সিরিয়া, জর্দান, লেবানন ও পূর্ণ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে প্রাচীনকালে ‘শাম দেশ’ বলা হতো। শাম মূলত নবী-রাসুলদের ভূখণ্ড।
কোরআন-হাদিসের একাধিক জায়গায় এর ফজিলতের কথা এসেছে। এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যাদের দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকেও আমি উত্তরাধিকার দান করেছি, এই ভূখণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের যাতে আমি বরকত সন্নিহিত রেখেছি। ’ (সুরা : আরাফ, আাায়াত : ১৩৭) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা এর বরকত সম্পর্কে বলেন, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনকারী। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১) সব মুফাসসিরিন একমত, উল্লিখিত আয়াতে ‘পবিত্র ভূমি’ এবং ‘বরকতময় ভূমি’ দ্বারা শামের ভূমিই উদ্দেশ্য। আর আয়াতে বরকত দ্বারা কেউ বেলেছেন, এখানে দুনিয়াবি বরকত উদ্দেশ্য। যেমন—এই পবিত্র ভূখণ্ড সর্বদা অধিক পরিমাণে আহার্য, ফলমূল, নদী-নালা, খাদ্যশস্য ও রিজিকের প্রশস্ততায় পরিপূর্ণ থাকবে। আর কেউ বলেছেন, এখানে বরকত দ্বারা দ্বিনের বরকতে ধন্য হওয়া উদ্দেশ্য। কারণ এখানে বহুসংখ্যক নবী-রাসুল বসবাস করেছেন, এখানেই ফেরেশতারা তাদের কাছে আসমানি ওহি নিয়ে অবতরণ করেছেন। তবে বিশুদ্ধ মত হলো, এখানে দ্বিন-দুনিয়া উভয় দিকের বরকতই রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম (সা.) শামের জন্য দোয়া করে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের শাম দেশে ও ইয়েমেনে বরকত দান করুন। ’ (বুখারি, হা: ১০৩৭) তা ছাড়া বরকতময় এই ভূমিকে আল্লাহ তাআলা অনেক মর্যাদা দান করেছেন। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— ১) শাম হবে হাশরের ময়দান ইমাম কুরতুবি, ইবনে কাসির ও ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, শাম হলো হাশরের ভূমি। প্রথমবার ইহুদিদের শামে বহিষ্কার করার দ্বারা প্রথম হাশর সংঘটিত হয়েছে। আর দ্বিতীয়বার সেখানেই সমগ্র মানবজাতির জন্য হাশরের ময়দান হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, হাকিম বিন মুয়াবিয়া (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সেখানেই তোমাদের হাশর হবে (তোমরা একত্র হবে)। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। সেখানেই তোমাদের হাশর হবে। তখন লোকেরা আরোহী, পদাতিক ও অধঃমুখী এই তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ইবনে বুকাইর (রহ.) বলেন, সেখানেই তোমাদের হাশর হবে বলার সময় তিনি শাম দেশের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। (মুসনাদে আহমদ : ৩৩/২১৪) ২) ফেরেশতারা নিজের ডানাকে এ দেশে ছড়িয়ে দেন ফেরেশতারা শামের ওপর নিজের ডানা দিয়ে আবৃত করে রাখেন, যা এই ভূখণ্ডের মাহাত্ম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। জায়েদ বিন সাবেত (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, শামের জন্য সৌভাগ্য, শামের জন্য মারহাবা! আমি বললাম, শামের জন্যই কেন? তিনি উত্তর দিলেন, ফেরেশতারা শামের ওপর নিজের ডানা ছড়িয়ে দেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৯৫৪) ৩) শাম ও তার অধিবাসীদের দায়িত্ব নিয়েছেন আল্লাহ ইবনু হাওয়ালা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শিগগিরই ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটবে, যখন জিহাদের জন্য তিনটি সেনা দল গঠিত হবে—সিরিয়ার সেনাবাহিনী, ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ও ইরাকের সেনাবাহিনী। ইবনু হাওয়ালা (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি সেই যুগ পেলে আমার জন্য কোন দলের সঙ্গী হওয়া মঙ্গলজনক মনে করেন? তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। কেননা তখন এই এলাকাই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম গণ্য হবে। আল্লাহ তার সত্কর্মশীল বান্দাদের এখানে একত্র করবেন। আর তুমি সিরিয়া যেতে রাজি না হলে অবশ্যই ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর সঙ্গী হবে। তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের কূপগুলো থেকে পানি উত্তোলন করো। কেননা মহান আল্লাহ আমার অসিলায় সিরিয়া ও এর অধিবাসীদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৮৩) ৪) কোরআন ও ইসলামের ঘাঁটি হবে শাম আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি (দিব্যদৃষ্টি বা স্বপ্নে) দেখলাম যে কিতাবুল্লাহকে আমার বালিশের নিচ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। অতঃপর আমি স্পষ্টরূপে দেখলাম যে তা যেন এক উজ্জ্বল আলোতে রূপান্তরিত হলো, যার উৎস শাম থেকে। জেনে রেখো! যখন ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে তখন ঈমান শামেই অবস্থান করবে এবং কিতাবুল্লাহ এবং ইসলামের মজবুত ঘাঁটিও সেখানেই থাকবে। আর শামবাসীরা তার হেফাজতে অবিচল থাকবে (মুসতারকে হাকিম : ৫/৭১২-১১৩) ৫) আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত দল শামে অবস্থান করবে নবী করিম (সা.)-এর বর্ণিত সাহায্যপ্রাপ্ত বিজয়ী দলটি শামেই অবস্থান করবে। মুআবিয়া ইবনু কুররা (রহ.) তার বাবা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শামবাসীরা খারাপ হয়ে যাবে তখন তোমাদের আর কোনো কল্যাণ থাকবে না। তবে আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল সব সময়ই সাহায্যপ্রাপ্ত (বিজয়ী) থাকবে। যেসব লোক তাদের অপমানিত করতে চায় তারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। (তিরমিজি, হা: ২১৯২) অন্য হাদিসে এসেছে, সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পশ্চিম দেশীয়রা বরাবর হকের ওপর বিজয়ী থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৫২) ইমাম নববী পশ্চিম দেশীয়ের ব্যাখ্যা করেছেন, আরব বা শামবাসী। (মুখতাসারু শরহে মুসলিম : ৫/১৮৫ ) ইমাম আহমদ ও শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এই মতটি সমর্থন করেছেন। ৬) শামে অবস্থানের জন্য নবীজির অসিয়ত নবী করিম (সা.) তার উম্মতকে শামে অবস্থানের জন্য অসিয়ত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের আগে হাজরামাউত সাগর বা এলাকা থেকে আগুন বের হয়ে মানুষকে এক জায়গায় একত্র করবে। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাহলে তখন আমাদের প্রতি আপনার নির্দেশ কী? তিনি বললেন, তখন শামের ভূমিকে আঁকড়ে ধরবে। (মুসনাদে আহমদ : ৯/১৪৫) ৭) সর্বোত্তম আবাসভূমি শাম নবী করিম (সা.) শামের প্রশংসা করেছেন এবং তাকে সর্বোত্তম আবাসভূমি বলে আখ্যা দিয়েছেন। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যুদ্ধের দিন মুসলিমদের শিবির স্থাপন করা হবে ‘গূতা’ নামক শহরে, যা সিরিয়ার সর্বোত্তম শহর দামেস্কের পাশে অবস্থিত। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪২৯৮) ৮) কিয়ামত-পূর্ব ঈসা নবীর অবতরণের স্থান হবে শাম ইসা ইবনে মারইয়াম (আ.)-এর অবতরণের স্থান হলো শাম। নাওয়াস বিন সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ঈসা ইবনে মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন। তিনি দুজন ফেরেশতার কাঁধের ওপর ভর করে ওয়ারস ও জাফরান রঙের জোড়া কাপড় পরিহিত অবস্থায় দামেস্ক নগরীর পূর্ব দিকের উজ্জ্বল মিনারে অবতরণ করবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭২৬৩) ৯) আল্লাহর শত্রু দাজ্জালকে হত্যা করা হবে শামেই শামেই ঈসা (আ.)-এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। হাদিস শরিফে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, যখন মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হতে শুরু করা মাত্র সালাতের সময় হবে। অতঃপর ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন এবং সালাতে তাদের ইমামতি করবেন। আল্লাহর শত্রু (দাজ্জাল) তাকে দেখামাত্রই বিচলিত হয়ে যাবে, যেমন—লবণ পানিতে মিশে যায়। যদি ঈসা (আ.) তাকে এমনিই ছেড়ে দেন তবে সে-ও নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ তাআলা ঈসা (আ.)-এর হাতে তাকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ঈসা (আ.)-এর বর্শায় তিনি তাদের দেখিয়ে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭১৭০) ১০) খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান শাম খাঁটি মুমিনদের বাসস্থান হলো শামের পবিত্র ভূমি। সালামা বিন নুফাইল (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, জেনে রেখো! মুমিনদের বাসভূমির উৎস হবে শাম। (মুসনাদে আহমদ : ২৮/১৬৫) ১১) কিয়ামত-পূর্ব শাম হবে নিরাপদ ও ফিতনামুক্ত কিয়ামত-পূর্ব শাম নিরাপদ ও ফিতনামুক্ত থাকবে। ইমাম ইবনে আসির (রহ.) বলেন, ইসলামের মূল উৎস হবে শাম। যেন রাসুলুল্লাহ (সা.) ফিতনার যুগের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। অর্থাৎ শাম তখনো নিরাপদ থাকবে এবং মুসলিমরা সেখানে ফিতনামুক্ত থাকবে। (আন-নিহায়া ফি গরিবিল, হাদিস : ৩/২৭১)
|
|
|
|
ইতিহাস, ঐতিহ্য, সুফিবাদ এবং রহস্যময়তার পীঠস্থান হলো ভারতের রাজস্থানের খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর দরগাহ। ধর্ম, সম্প্রদায় ও ভৌগলিক সীমানার চৌকাঠ পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে এটি এমন এক স্থান অর্জন করেছে, যা পরিদর্শন করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে যায়।
শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বী নন, হিন্দুরা দর্শনার্থীও আজমীরের দরগাহে উপস্থিত হয়। সেখানে নারীরাও প্রবেশ করতে পারে। বহু হিন্দু নারীই এই দরগাহে যায় মানত পূরণ করতে।
বর্তমান সময়ে খবরের শিরোনাম আজমীরের দরগাহ, তবে সেটা ভিন্ন কারণে। শিব মন্দিরের ওপরে এই দরগাহ বানানো হয়েছিল বলে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন হিন্দু সেনা নামে এক সংগঠনের সভাপতি ভিষ্ণু গুপ্তা।
তার দাবির স্বপক্ষে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক হরবিলাস সারদারের বইয়ের তথ্যসহ তিনটি কারণ উল্লেখ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি এবং সেখানে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতির জন্যও আবেদন জানিয়েছেন। ভিষ্ণু গুপ্তার দাবি, মন্দিরের অস্তিত্বের ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে।
অন্যদিকে, আজমীর দরগাহের প্রধান উত্তরাধিকারী এবং খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর বংশধর সৈয়দ নাসিরুদ্দিন চিশতী ওই দাবিকে ‘সস্তা প্রচার পাওয়ার জন্য স্টান্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আগামী ২০ ডিসেম্বর আজমীরের খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর দরগাহ-সংক্রান্ত মামলার শুনানি রয়েছে। অন্যদিকে, জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর উরস। উরস উপলক্ষে প্রতিবছর দুই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে শামিল হন কয়েক লাখো লাখো মানুষ। বেশ আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই দরগাহকে ঘিরে যে দাবি ও পাল্টা দাবির ঝড় উঠেছে তাকে কেন্দ্র করে আজমীরের পরিস্থিতি অন্যবারের তুলনায় বেশ আলাদা।
আজমিরের খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর দরগাহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত দরগাহগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে মানুষ এই দরগাহ পরিদর্শনে আসে। দেশ-বিদেশের বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদরা এখানে চাদর দেন।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ রাজস্থানের এই দরগাহ যার নামে তৈরি, তিনি হলেন রহস্যবাদী দার্শনিক ও সুফি সাধক খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ‘গরিবে নেওয়াজ’ নামে পরিচিত।
বলা হয়, মোহময়ী সাধক ছিলেন মুঈনুদ্দীন চিশতী। উন্নত ও অতুলনীয় জীবনাদর্শ বিখ্যাত করে তুলেছিল তাকে। খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী মনে করতেন, মানুষ শান্ত থেকেও কারও অত্যাচারকে প্রতিহত করতে পারে। কথিত আছে, বহুদিনই তিনি নিজে একটা রুটি খেতেন কিন্তু ক্ষুধার্তদের জন্য সবসময় লঙ্গর প্রস্তুত থাকত। অসহায় এবং ক্ষুধার্ত দরিদ্রদের প্রতি তার আতিথেয়তার কথা কারোরই অজানা ছিল না।
ঐতিহাসিক রানা সাফভি লিখেছেন, ‘খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর বক্তৃতা রাজা ও কৃষক উভয়কেই আকৃষ্ট করেছিল। আজমিরের নাম শুনলেই খাজা গরিব নেওয়াজ ও তার দরগাহের ছবি মনে ভেসে ওঠে। এই সাধক সমুদ্রের মতো উদার এবং তার অতিথিপরায়ণতা ছিল বিশ্বের মতো ব্যাপক।’
খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর মৃত্যুর পর তার সমাধিতে এই দরগাহের নির্মিত হয় যা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে দিল্লির সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। মান্ডুর সুলতান মাহমুদ খিলজি ও তার পরে গিয়াসউদ্দিন সেখানে সমাধিসৌধ এবং সুন্দর একটা গম্বুজ নির্মাণ করেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলক সম্ভবত প্রথম সম্রাট ছিলেন, যিনি ১৩২৫ সালে এই দরগাহ পরিদর্শন করেন।
আর তুঘলক শাসক জাফর খান দরগাহ পরিদর্শন করেছিলেন ১৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। সফরকালে সময় দরগাহের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বহু উপহার দিয়েছিলেন তিনি।
মান্ডুর খিলজি ১৪৫৫ সালে আজমিরের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন। ওই সময় এই দরগাহ তার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। তার শাসনকালে দরগাহের প্রাঙ্গণে বিশাল ফটক, বুলন্দ দরওয়াজা এবং মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এর আগে পর্যন্ত তেমন মজবুত কোনো নির্মাণ ছিল না সেখানে।
ঐতিহাসিকদের মতে, আদি দরগাহ ছিল কাঠের তৈরি। পরে এর ওপর একটা পাথরের ছাউনি নির্মাণ করা হয়।
ইতিহাসবিদ রানা সাফাভির মতে, ‘দরগাহ পরিসরে নির্মাণের প্রথম মজবুত প্রমাণ হলো- তার গম্বুজ, যা ১৫৩২ সালে অলঙ্কৃত করা হয়েছিল। এটা সমাধির উত্তর দেয়ালে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটা শিলালিপি থেকে স্পষ্ট। এই সেই সুন্দর গম্বুজ যা আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি। ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গম্বুজকে পদ্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এবং রামপুরের নবাব হায়দার আলী খানের দেওয়া একটা সোনার মুকুট এর ওপরে স্থাপন করা হয়েছে।’
ঐতিহাসিক আবুল ফজল লিখেছেন, ‘আকবর প্রথম মোগল শাসক যিনি ১৫৬২ সালে প্রথমবার দরগাহ পরিদর্শন করেছিলেন। দরগাহের সঙ্গে যুক্ত লোকদের উপহার ও অনুদান দিয়েছিলেন।
তার মতে, ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে আকবর তার প্রথমবারের মানত পূরণের জন্য পায়ে হেঁটে দরগাহে এসেছিলেন। তখন আকবর দেখেছিলেন যে, হাজার হাজার দরিদ্র ও তীর্থযাত্রীদের জন্য লঙ্গরের আয়োজন করা হয়েছিল। তাই তিনি আজমীর, চিতোর এবং রণথম্ভোরের ১৮টা গ্রাম দিয়ে দেন।
আকবর ১৫৬৯ সালে আজমিরে একটা মসজিদ ও খানকা নির্মাণের নির্দেশ দেন। সেই আদেশ অনুযায়ী তৈরি হয় লাল বেলেপাথরের আকবরী মসজিদ। শাহজাহান ১৬৩৭ সালে একটা সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন যা দরগাহের পশ্চিমে শাহজাহানী দরওয়াজার সঙ্গে অবস্থিত।
আজমিরের এই দরগাহ পরিদর্শনে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা আসে এবং এই পরম্পরা শত শত বছর ধরেই চলে আসছে। বার্ষিক উরস উৎসবের সময় লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয় এবং এই রীতি এখনো চলে আসছে। এখানে নারীদের অবাধ প্রবেশ রয়েছে। হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নারীরাও এই দরগাহ দর্শনের জন্য আসে, কেউ বা নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য মানত করে।
প্রায় ৮০০ বছরের ইতিহাসে দিল্লির সুলতান, মোগল সম্রাট, রাজপুত, মারাঠা, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর দরগাহ। তবে এর আগে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হননি যেমনটা এখন হয়েছে।
তবে আজমীর শরীফের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা আঞ্জুমান কমিটি বিষ্ণু গুপ্তার দাবি খারিজ করে দিয়েছে। আঞ্জুমান কমিটির সেক্রেটারি সৈয়দ সরওয়ার চিশতী বলেন, ‘আমরা বংশানুক্রমিক খাদেম, যারা গত ৮০০ বছর ধরে দরগাহের সঙ্গে সম্পর্কিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য কাজ করছি। কিন্তু এক্ষেত্রে (মামলায়) আমাদের কোনো পক্ষই করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আঞ্জুমান কমিটি খাদেমদের প্রতিনিধিত্ব করে, আর দরগাহ কমিটি শুধু তদারকির কাজ করে। এটা ষড়যন্ত্র, যা আমরা হতে দেবো না। আমরা আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছি। আমরা আদালতে যাব।
|
|
|
|
মিয়া আবদুল হান্নান : দুনিয়ার সৃষ্টিকুলের মধ্যে শুধু জিন ও মানুষকেই আল্লাহ তাআলা বিবেক ও চিন্তাশক্তি দান করেছেন। সত্য ও কল্যাণ বুঝে গ্রহণ করার সামর্থ্য দান করেছেন। অসত্য ও অকল্যাণ প্রত্যাখ্যান করার সামর্থ্য দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা চান মানুষ তার এই নেয়ামতের মূল্যায়ন করুক। চিন্তাশক্তি কাজে লাগাক। চোখে দেখে, কানে শুনে পর্যবেক্ষণ করার শক্তি কাজে লাগাক।
মানুষ যখন নিজের বিবেক, চিন্তা ও পর্যবেক্ষণশক্তি কাজে লাগায় এবং সত্য গ্রহণ করে, তখন মানুষ হয় সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ, যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষ যখন নিজের চিন্তাশক্তি অকেজো করে রাখে, আল্লাহ তাআলা চোখ, কান ও অন্তর দেওয়ার পরও অন্ধ ও বধির হয়ে থাকে, নির্বোধ হয়ে থাকে, তখন মানুষ হয় সবচেয়ে নিকৃষ্ট। মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট তো বটেই, চতুস্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। কারণ আল্লাহ তাআলার নেয়ামত পেয়েও সে সেগুলোর মূল্যায়ন করতে পারে নি।
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর, তা দ্বারা তারা বোঝে না; তাদের রয়েছে চোখ, তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের রয়েছে কান, তা দ্বারা তারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল। (সুরা আ’রাফ: ১৭৯)
আল্লহ তাআলা ‘জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ এর অর্থ এই নয় যে বিনা কারণে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছিল। বরং তারা নিজেদের কাজের কারণে জাহান্নামের উপযুক্ত হয়। যেহেতু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অন্তর, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছু দিয়েই সৃষ্টি করার পরও তারা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে না। তারা কিছু বোঝে না, দেখে না, শোনে না। অথচ তারা পাগল বা উম্মাদ নয় যে কিছুই বুঝতে পারবে না। অন্ধও নয় যে কোনো কিছু দেখবে না, বা বধিরও নয় যে কোনো কিছু শুনবে না। বরং তারা পার্থিব বিষয়ে অধিকাংশ লোকের তুলনায় অধিক সতর্ক ও চতুর।
কোরআনের আরেকটি আয়াতেও এ ধরনের ব্যক্তিদের সৃষ্টিকুলের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, অথচ তোমরা শুনছ। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে আমরা শুনেছি অথচ তারা শোনে না। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম বিচরণশীল প্রাণী হচ্ছে বধির, বোবা, যারা বোঝে না। (সুরা আনফাল: ২২)
অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সেসব মানুষই সবচেয়ে নিকৃষ্ট যারা সত্য ও ন্যায় শ্রবণের ব্যাপারে বধির এবং তা গ্রহণ করার ব্যাপারে বোবা হয়ে থাকে। কারণ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সত্য জানা ও সে পথে চলার জন্য চোখ ও কান দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সেগুলো কাজে লাগায়নি।
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, মানুষের চোখ, কান ও অন্তর সম্পর্কে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে যে আল্লাহর এই নেয়ামতগুলো সে কী কাজে লাগিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই। কান, চোখ আর অন্তর- এগুলোর প্রতিটির ব্যাপারেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুরা ইসরা: ৩৬)
|
|
|
|
দেশের কল্যাণ, নিরাপত্তা, মুক্তি ও শান্তি কামনার ও মোনাজাতের মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) শেষ হয়েছে শুরায়ে নেজামের ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা। গভীর ভাবাবেগপূর্ণ পরিবেশে ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে সকালের আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে মহামহিম ও দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে অপার করুণা ও অশেষ রহমত কামনা করেছেন দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। এর আগে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের (বোম্বে) মাওলানা আব্দুর রহমান।
সকাল ৯টা ০৫ মিনিটে শুরু করে ৯টা ২০ মিনিট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ মিনিট স্থায়ী আবেগঘন মোনাজাতে হাজারো কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে রাহমানুর রাহিম আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। মনিব-ভৃত্য, ধনী-গরীর সকল শ্রেণির মানুষ পরওয়ারদেগার আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে চিল্লাধারী মুসল্লিরা ছাড়াও ঢাকা, গাজীপুর, টঙ্গী ও আশুলিয়াসহ আশপাশের শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সকাল থেকে ময়দানে জড়ো হন।
জোড় ইজতেমায় ৪ মুসল্লির মৃত্যু: শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত জোড় ইজতেমায় ৪ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন-রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার বৌরাগীপাড়া গ্রামের মৃত মুকবুল হোসেনের ছেলে হায়দার আলী (৩৫), দিনাজপুর সদরের মোস্তাপুর গ্রামের মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে কাউসার আলী (২৮), সিরাজগঞ্জ সদরের শহিদুল ইসলাম (৬৫) ও আব্দুল হাকিম আকন্দ (৭২)।
আয়োজক কমিটির সন্তোষ প্রকাশ: শুরায়ে নেজামের ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান জোড় ইজতেমা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে মোবারকবাদ জানান। তিনি বলেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে শুরায়ে নেজামের বিশ্ব ইজতেমা। শেষ হবে ২ ফেব্রুয়ারি।
|
|
|
|
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে ৫ দিনের জোড় ইজতেমায় আজ তৃতীয় দিনের আম বয়ান চলছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের ইমান, আমল ও আখলাককে পরিপূর্ণ শুদ্ধরূপে গড়ে তুলতে বয়ান শুনছেন ইজতেমার শীর্ষ আলেম ও মুরুব্বিরা।
রোববার (১ ডিসেম্বর) ফজরের নামাজের পর থেকেই শুরু হয় ইসলামি দাওয়াতি আম বয়ান। যা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের মুসল্লিরা। ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাচ্ছেন তারা।
এরপর ৩ ডিসেম্বর ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। প্রথম পর্বের জোড় ইজতেমার আয়োজন করেন শুরায়ী নেজাম (মাওলানা যোবায়ের অনুসারীরা)। এরপর দ্বিতীয় পর্ব মাওলানা সাদ অনুসারীদের জোড় ইজতেমা আগামী ১৯ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২৩ ডিসেম্বরে শেষ হবে।
জোড় ইজতেমা হলো তাবলিগ জামাতের একটি অনুষ্ঠান। বিশ্ব ইজতেমার আগে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তবে, তাবলিগ জামাতের সব সাথিই জোড় ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। সাধারণত, তিন চিল্লার সাথিদের নিয়ে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, জোড় ইজতেমা শেষে বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে আগামী বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে মুসল্লিদের দাওয়াত দেবেন তারা। এই জোড় ইজতেমা থেকেই সিদ্ধান্ত হবে কীভাবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা সফল করা যায়।
|
|
|
|
|
|
|
|