বাংলার জন্য ক্লিক করুন
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * ৬৬ কোটি টাকার লটারি জিতলেন বাংলাদেশের মনসুর   * নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরিবেশ উপদেষ্টার সাক্ষাৎ   * বাইডেনের আলোচনা করেই ইরানে হামলা চালাবে ইসরায়েল!   * ড. ইউনূসকে ৬৬৬ কোটি টাকা কর দেওয়ার রায় প্রত্যাহার   * সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের জামিন   * হিজবুল্লাহর হামলায় একদিনে ৮ ইসরায়েলি সেনা নিহত   * নদীর পানি বাড়ছে দুই বিভাগে   * বার্ড ফ্লু : ভিয়েতনামে প্রাণ গেল ৪৭টি বাঘ, ৩টি সিংহের   * নাইজেরিয়ায় নৌকা ডুবে ১৬ জনের মৃত্যু   * সকাল থেকে ঢাকায় বৃষ্টি, দুর্ভোগ  

   ইসলাম -
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 
আল্লাহর নাম ‘যুল জালালি ওয়াল ইকরাম’

মিয়া আবদুল হান্নান : আল্লাহর গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে একটি নাম হলো, ‘যুল জালালি ওয়াল ইকরাম’ অর্থ মহামহিম ও মহানুভব; যিনি পরিপূর্ণ মহত্ত্ব ও পরিপূর্ণ সম্মানের মালিক। আল্লাহ ছাড়া বিশ্বজগতে আর কোনো সত্ত্বা এই গুণ বা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে না। আল্লাহর এই গুণবাচক নামটি এসেছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

তোমার রবের নাম বরকতময়, যিনি মহামহিম ও মহানুভব। (সুরা আররাহমান: ৭৮)

এই নামে আল্লাহকে ডাকার জন্য বলতে হবে ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ অর্থ হে মহামহিম ও মহানুভব! হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই নামে আল্লাহকে ডাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আপনারা ‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ কে অপরিহার্য করে নিন অর্থাৎ সব সময় এই নামে আল্লাহকে ডাকুন। (সুনানে তিরমিজি)

নামাজের পর নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) যে দোয়া পড়তেন বলে বর্ণিত রয়েছে, তাতে থাকতো আল্লাহর এই বরকতময় নামটি। নবিজি (সা.) নামাজের পর তিনবার ইস্তেগফার পড়ে বা মুসল্লিদের দিকে ফিরে পড়তেন,

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময় এবং আপনার থেকে শান্তি আসে। আপনি কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী। (সহিহ মুসলিম: ১২২২)

এক সাহাবির দোয়া শুনে নবিজি (সা.) বলেছিলেন, তিনি আল্লাহকে ‘ইসমে আজমের’ সাথে ডেকেছেন। ওই দোয়ায় আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে ‘যুল জালালি ওয়াল ইকরাম’ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। আনাস (রা.) বলেন, একদিন আমি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে মসজিদে নববিতে বসে ছিলাম। তখন জনৈক সাহাবি নামাজ আদায় করছিলেন। নামাজের পর তিনি দোয়া করলেন,

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল হান্নানুল মান্নানু বাদীউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরামি ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুমু আসআলুকা

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবুদ নেই। আপনি সবচেয়ে বড় দয়ালু, বড় দাতা। আপনিই আসমান-জমিনের স্রষ্টা। হে সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী! হে চিরঞ্জীব, হে প্রতিষ্ঠাতা! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি।

তখন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে আল্লাহকে ইসমে আজমের সাথে ডাকে তিনি তাতে সাড়া দেন এবং যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করা হয় তখন তিনি তা দান করেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৫)

আল্লাহর নাম ‘যুল জালালি ওয়াল ইকরাম’
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : আল্লাহর গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে একটি নাম হলো, ‘যুল জালালি ওয়াল ইকরাম’ অর্থ মহামহিম ও মহানুভব; যিনি পরিপূর্ণ মহত্ত্ব ও পরিপূর্ণ সম্মানের মালিক। আল্লাহ ছাড়া বিশ্বজগতে আর কোনো সত্ত্বা এই গুণ বা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে না। আল্লাহর এই গুণবাচক নামটি এসেছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

তোমার রবের নাম বরকতময়, যিনি মহামহিম ও মহানুভব। (সুরা আররাহমান: ৭৮)

এই নামে আল্লাহকে ডাকার জন্য বলতে হবে ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ অর্থ হে মহামহিম ও মহানুভব! হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই নামে আল্লাহকে ডাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আপনারা ‘ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ কে অপরিহার্য করে নিন অর্থাৎ সব সময় এই নামে আল্লাহকে ডাকুন। (সুনানে তিরমিজি)

নামাজের পর নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) যে দোয়া পড়তেন বলে বর্ণিত রয়েছে, তাতে থাকতো আল্লাহর এই বরকতময় নামটি। নবিজি (সা.) নামাজের পর তিনবার ইস্তেগফার পড়ে বা মুসল্লিদের দিকে ফিরে পড়তেন,

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময় এবং আপনার থেকে শান্তি আসে। আপনি কল্যাণময় এবং সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী। (সহিহ মুসলিম: ১২২২)

এক সাহাবির দোয়া শুনে নবিজি (সা.) বলেছিলেন, তিনি আল্লাহকে ‘ইসমে আজমের’ সাথে ডেকেছেন। ওই দোয়ায় আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে ‘যুল জালালি ওয়াল ইকরাম’ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। আনাস (রা.) বলেন, একদিন আমি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাথে মসজিদে নববিতে বসে ছিলাম। তখন জনৈক সাহাবি নামাজ আদায় করছিলেন। নামাজের পর তিনি দোয়া করলেন,

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল হান্নানুল মান্নানু বাদীউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরামি ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুমু আসআলুকা

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। কারণ আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আপনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মাবুদ নেই। আপনি সবচেয়ে বড় দয়ালু, বড় দাতা। আপনিই আসমান-জমিনের স্রষ্টা। হে সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী! হে চিরঞ্জীব, হে প্রতিষ্ঠাতা! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি।

তখন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে আল্লাহকে ইসমে আজমের সাথে ডাকে তিনি তাতে সাড়া দেন এবং যখন তাঁর কাছে প্রার্থনা করা হয় তখন তিনি তা দান করেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৫)

মসজিদে শোরগোল নিয়ে রাসূল সা.-এর সতর্কবার্তা
                                  

মুসলিম সমাজের সবাই মসজিদের সম্মান, পবিত্রতা রক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করেন। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে সচেতন থাকার চেষ্টা করেন, কোনোভাবে যেন আল্লাহর ঘরের পবিত্রতা নষ্ট না হয় এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকেন। এখানে সবাই আল্লাহ তায়ালাকে ডাকার এবং শুধু তাঁরই ইবাদত করার চেষ্টা করেন।

পবিত্র কোরআনেরও আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে মসজিদে শুধু তাঁর ইবাদত করার কথা বলেছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘মসজিদ মূলত আল্লাহর ঘর। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না।’ (সূরা জিন, আয়াত : ১৮)

মসজিদে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কোনোভাবে ডাকার অবকাশ নেই। কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে তাই বোঝানো হয়েছে। ইবাদত ছাড়া অন্য কিছুর কোনো সুযোগ অবশ্যই নেই মসজিদে। একইসঙ্গে এর পবিত্রতা রক্ষারে বিষয়ে কোনো ধরনের গড়িমড়ির সুযোগ নেই। যেকোনো মূল্যে মসজিদকে দুনিয়ার অনাকাঙ্খিত বিষয় থেকে রক্ষা করতে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এসব মসজিদ বানানো হয়েছে আল্লাহর স্মরণ ও আলোচনা, নামাজ ও কোরআন পাঠের জন্য। (মুসলিম, হাদিস : ২৮৫)

আল্লাহর রাসূলের যুগে মদিনায় মসজিদককে কেন্দ্র করে সমাজ পরিচালিত হতো। মসজিদে নববী থেকে তিনি সাহাবিদের সব নির্দেশ দিতেন, আল্লাহ তায়ালার বিধান জানাতেন মসজদ থেকেই। তবে তিনি সবসময় মসজিদের সম্মান রক্ষার নির্দেশ দিতেন।

এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মসজিদকে অবুঝ শিশু ও পাগলদের থেকে দূরে রাখো, তদ্রুপ ক্রয়-বিক্রয়, বিচার-আচার, উচ্চ স্বর, দণ্ডপ্রদান ও তরবারি কোষমুক্ত করা থেকে বিরত থাকো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৫০)

হাদিসে মসজিদে উচ্চ আওয়াজ ও চেঁচামেচি কিয়ামতের নিদর্শন হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যখন লোকেরা জিহাদলব্ধ গনিমতের সম্পদকে নিজের সম্পত্তি বুঝবে, আমানতকে স্বীয় সম্পত্তি গণ্য করবে, জাকাতকে জরিমানা মনে করবে, দ্বিনি ইলম ছাড়া অন্য ইলম শিক্ষা করবে, পুরুষ স্ত্রীর তাবেদারি করবে, নিজ মায়ের নাফরমানি করবে, বন্ধু-বান্ধবকে ঘনিষ্ঠ ভাববে আর আপন পিতাকে দূরবর্তী বলে বুঝবে, মসজিদে উচ্চ স্বর ও চেঁচামেচি বেড়ে যাবে, ফাসেক লোক সমাজের সর্দার হবে, সর্বাপেক্ষা নিচ প্রকৃতির লোক সমাজের কার্যভারপ্রাপ্ত হবে, জালিমকে তার জুলুমের ভয়ে লোক সম্মান করবে, নর্তকী ও বাদ্যযন্ত্র বিস্তার লাভ করবে, মদ প্রচুর পরিমাণে পান করা হবে, পরবর্তী লোকেরা পূর্বপুরুষকে মন্দ বলবে, তখন তোমরা এরূপ বিপদের অপেক্ষা করতে থাকবে যে লালবর্ণের প্রচণ্ড বায়ু অথবা ভূমিকম্প, জমিন ধসে যাওয়া, লোকের রূপান্তর হওয়া ও পাথর বর্ষণ হওয়া ইত্যাদি পরিলক্ষিত হবে। আরো অনেক আপদ-বিপদ ধারাবাহিকভাবে আসতে থাকবে, যেমন মুক্তামালা ছিঁড়ে গেলে দানাসমূহ খসে পড়তে থাকে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২১০, ২২১১)

এই হাদিসে রাসূল সা.-এর কাছ থেকে কিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণিত হয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো মসজিদে চিৎকার, চেঁচামেচি বেড়ে যাওয়া। বর্তমানে এমন ঘটনা অনেকাংশে বেড়েছে। যা রাসূল সা.-এর বর্ণিত হাদিসের বাণীর প্রতি ঈঙ্গিত করে।

অন্যায়ের সহযোগী না হতে আল্লাহর নির্দেশ
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : নিজে ভালো কাজ করার পাশাপাশি ভালো কাজে পরস্পরের সহযোগিতা করা, দলবদ্ধভাবে সমাজে ভালো কাজের বিস্তার ঘটানো মুমিনদের কর্তব্য। একইভাবে অন্যায় কাজে পরস্পরের সহযোগী না হওয়া, সমাজে অন্যায় কাজ হলে সাধ্য অনুযায়ী বাধা দেওয়াও জরুরি। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর; নিশ্চয় আল্লাহ আজাব প্রদানে কঠোর। (সুরা মায়েদা: ২)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, এ আয়াতে সব মানুষকে সব রকম ভালো কাজে সাহায্য করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ভালো কাজে পরস্পরের সহযোগী হও, পরস্পরকে উৎসাহ দাও এবং ভালো কাজ করো, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাক, খারাপ কাজে সহযোগিতা থেকে বিরত থাক। (আল-জামি’ লিআহকামিল কোরআন)

আমাদের দেশে ন্যায়ের নামে অনেক সময় অন্যায় হয়। কাউকে অপরাধী হিসেবে সন্দেহ হলে আইনের হাতে সোপর্দ না করে, যথাযথ তদন্ত ও বিচার ছাড়াই শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সব ক্ষেত্রে অনেকেই জুলুমের সহযোগী হয়ে যান। নিজে মারপিটে অংশগ্রহণ না করলেও বাঁধা দেন না। ভাবেন অপরাধীকেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, এখানে বাঁধা দেওয়ার কিছু নেই।

তারা ভুলে যান যে অপরাধীরও ন্যায় পাওয়ার অধিকার আছে। ইসলাম অপরাধী ও চরম শত্রুর প্রতিও ন্যায় আচরণ করার নির্দেশ দেয়। জুলুম ও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে। বিদ্বেষ ও শত্রুতাবশত জুলুম বা বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের সাক্ষ্যদাতা হিসেবে আল্লাহর পথে দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান থাক, কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এতটা উত্তেজিত না করে যে তোমরা ইনসাফ করা ত্যাগ করবে, সুবিচার কর, এটা তাকওয়ার নিকটবর্তী, তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। (সুরা মায়েদা: ৮)

নিজের ভাই, বন্ধু যদি জুলুম করে তাহলে তাকে বাঁধা দেওয়া, জুলুম থেকে বিরত করা আবশ্যক। জালিম অবস্থায় মুসলমান ভাইকে বাধা দেওয়াই তার সহযোগিতা গণ্য হয়। আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন বললেন, অত্যাচারী হোক বা অত্যাচারিত হোক তোমার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করো। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো অত্যাচারিতকে সাহায্য করব, অত্যাচারীকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি? আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে অত্যাচার থেকে নিবৃত্ত করো, এটাই অত্যাচারীর প্রতি তোমার সাহায্য। (সহিহ বুখারি: ২৪৪৩, সহিহ মুসলিম: ২৫৮৪)

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : ৫৭০ সালের এই দিনে ১২ রবিউল আউয়াল আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।আজ সোমবার (১২ রবিউল আউয়াল)১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম এর শুভ আবির্ভাব ঘটে। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে (১২ রবিউল আউয়াল) আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম ।ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ সকল কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবনের ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। আজ সোমবার, ১২ রবিউল আউয়াল। এ দিন মানব জাতির শিরোমণি মহানবী হযরত মুহম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম এর জন্ম ও ওফাতের দিন। জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম । আবার এই দিনে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান সারা জাহান কাঁদিয়ে । জন্ম ৫৭০ খ্রি. (৫৩ হিজরিপূর্ব) মক্কা, হেজাজ, আরব।

মৃত্যু ৮ জুন ৬৩২ খ্রি. (১১ হিজরি; বয়স ৬১–৬২) মদিনা, হেজাজ, আরব
সমাধিস্থল মসজিদে নববির, সবুজ গম্বুজের নিচের সমাধিক্ষেত্র, মদিনা, সৌদি আরব ২৪°২৮′০৩″ উত্তর ৩৯°৩৬′৪১
কুরআন সুন্নাহর আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র গুরুত্ব ও তাৎপর্য ঈদ ও মিলাদ প্রসঙ্গ: ঈদ অর্থ খুশী, আনন্দ, মিলাদ অর্থ জন্মদিন, জন্মকাল, জন্মস্থান, জম্মোৎসব, ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার হয়। এ অর্থে ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ অদৃশ্যের সংবাদদাতা আল্লাহর প্রেরিত বান্দা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম`র শুভাগমন উপলক্ষে শরয়ী পন্থায় খুশী, আনন্দ উদযাপন করা। আল্লাহর প্রিয় হাবীবের শুভাগমনের স্মৃতি বিজড়িত রবিউল আউয়াল শরীফের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করুন। নূর নবীজির পৃথিবীতে শুভাগমনের ঐতিহাসিক মহিমান্বিত রবকত মন্ডিত দিন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর খুশী উদযাপনের দিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিবসটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও আবহমান কাল থেকে পৃথিবীর দেশে দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশেষ গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। আজ বাদ মাগরিব বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব গেইটে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন।

অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।

আল কুরআনের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের গুরুত্ব: মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, হে প্রিয় হাবীব আপনি বলে দিন, তারা যেন আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করে উক্ত খুশি ও আনন্দ তাদের সমুদয় সঞ্চয় থেকে অতি উত্তম। উপরে বর্ণিত আয়াত সমূহে যেরূপভাবে নেয়ামতের র্চচা ও স্মরণ করার উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে অত্র আয়াতে দয়া, অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশী উদযাপনের নির্দেশ রয়েছে। প্রিয় নবী যে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর রহমত, এতে মুসলিম মিল্লাতের কোন দ্বিমত নেই। অত্র আয়াতে যদি ফজল ও রহমত দ্বারা অন্য কিছু উদ্দেশ্য করা হয় তাও হুজুরের ওসীলায় সৃজিত। সর্বাবস্থায় প্রিয় রাসুলের পবিত্র সত্তা আল্লাহ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত হওয়া প্রমাণিত। উভয় জাহানে তারই রহমতের বারিধারা প্রবাহিত, সুতরাং তাঁর গুণগান শান মান মর্যাদা ও মাহাত্ম্য স্মরণ করা ও আলোচনা করা বিধাতার আনুগত্যের নামান্তর, পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা করা অস্বীকার করা অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক।
হাদীস শরীফের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবীর তাৎপর্য: হযরত কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রিয় রাসুলের কাছে সোমবার দিবসে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে প্রিয় নবী এরশাদ করেন, এ দিনেই আমি আবির্ভূত হয়েছি এবং এদিনেই আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।(মিশকাত শরীফ ১৭৯ পৃষ্ঠা) আখেরী নবী প্রিয় নবীর উপরোক্ত হাদিস থেকে মিলাদুন্নবী তথা আখেরী নবী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম জন্ম দিবস ও নুযুলে কুরআন দিবসের গুরুত্ব এবং ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিবসের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন ও নেয়ামত প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোজা পালনের বৈধতা প্রমাণিত হলো। সুতরাং সাপ্তাহিক হিসেব অনুসারে প্রতি সোমবার যেমনি মুসলমানদের নিকট ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে তেমনি বার্ষিক হিসেবে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ বিশ্ব মুসলমানদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ এবং এ মাসে এ দিবসের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা অপরিসীম। ২৭ শে রমজান পবিত্র কুরআন অবতরনের দিন হিসেবে যেভাবে গোটা রমজান মাস সম্মানিত স্মরণীয় বরণীয়। তেমনিভাবে প্রিয় নবীর বেলাদত দিবস সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল মাসে হওয়ার কারণে গোটা মাস মুসলিম মিল্লাতের কাছে ঐতিহাসিকভাবে সমাদৃত এবং এ মাসের গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ওলামায়ে ইসলামের সর্বসম্মতিক্রমে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। প্রসঙ্গত ঃবোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ কুস্তালানী মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (র.) প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেন যে, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রা.) এর মতো বিশ্ববিখ্যাত ওলামায়ে কেরাম বলেন, প্রিয় নবীর জন্মদিবস শবে ক্বদর থেকে উত্তম, আরো বলেন শুক্রবার আদম (আ.) এর জন্ম দিবস হওয়ার কারণে যদি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর গ্রহণযোগ্যতা সর্বজন স্বীকৃত হয় তাহলে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জন্ম দিবসের পবিত্র ক্ষণ ও মুহূর্ত তোমার ধারণা মতে কেমন হওয়া উচিত। তাঁর সমুন্নত মর্যাদার যথার্থ বর্ণনা আদৌ কি সম্ভব। (জুরকানী শরহে মাওয়াহিব পৃঃ ১৩২-১৩৫ মাদারেজুন্নবুয়ত ২য় খন্ড ১৩ পৃষ্ঠা)ঈদ ও মিলাদ প্রসঙ্গ: ঈদ অর্থ খুশী, আনন্দ, মিলাদ অর্থ জন্মদিন, জন্মকাল, জন্মস্থান, জম্মোৎসব, ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার হয়। এ অর্থে ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ অদৃশ্যের সংবাদদাতা আল্লাহর প্রেরিত বান্দা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শুভাগমন উপলক্ষে শরয়ী পন্থায় খুশী, আনন্দ উদযাপন করা। এতদ উপলক্ষে নবীজির জন্মকালীন অলৌকিক ঘটনাবলীর বর্ণনা করা, তাঁর বাল্যজীবন, শৈশব, কিশোর জীবন, মক্কী জীবন, মদনী জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, হিজরত, জিহাদ, ইসলামী দাওয়াত প্রচার সম্প্রসারণ, সার্বিক বিষয়াদির গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা করার নামই মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এক শ্রেণির লোকেরা প্রচার করে থাকে ইসলামে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দুই ঈদ ছাড়া তৃতীয় কোন ঈদের অস্তিত্ব নেই। এ দাবী ভিত্তিহীন, মনগড়া কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। দেখুন! ঈসা (আ)’র উপর আসমান থেকে খাবার ভর্তি দস্তরখানা অবতীর্ণ হওয়ার দিন, আরাফাতের দিন, শুক্রবার জুমার দিনসহ আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন সমূহকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করার বর্ণনা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
আল কুরআনে ঈদ শব্দের ব্যবহার: “ঈসা ইবনে মরিয়ম বলেন, হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভূ আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। এটা হবে আমাদের পূর্ববতীও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ। (সূরা: আল মায়িদা, আয়াত: ১১৪)আসমান থেকে খাদ্য অবরতণের দিবস যদি ঈদের দিবস হয়। যে দিন সমগ্র সৃষ্টির মূল ধরাধামে তাশরীফ এনেছেন সে দিন কেনই বা ঈদের দিবস হবে না? ঈদে মীলাদুন্নবী হিসেবে এ দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কতইনা গুরুত্ববহ কতইনা আনন্দের।

কুরআনের আয়াত অবতরণের দিন যদি ঈদের দিন হয়। ছাহেবে কুরআনের শুভাগমন দিবস অবশ্যই ঈদের দিবস। আমীরুল মুমেনীন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, এক ইয়াহুদী লোক আমীরুল মুমেনীনকে বললেন, হে আমীরুল মুমেনীন, আপনারা আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত পাঠ করেন, সে ধরনের আয়াত যদি আমাদের উপর নাযিল হতো, সে দিনকে আমরা ঈদ হিসেবে পালন করতাম। আমীরুল মুমেনীন বলেন, সে আয়াত কোনটি? তখন ইয়াহুদী বলল, আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম ......... তখন হযরত ওমর (র.) এরশাদ করেন, আমরা সে আয়াত এবং আয়াত নাযিল হওয়ার স্থানকে ছিনি। (মুসনাদ আবু য়া’লা: ১৩৪)
জুমাআর দিন মুসলমানদের ঈদের দিন: প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় এটা (জুমাবার) ঈদের দিন। আল্লাহ তা’য়ালা এটা মুসলমানদেরকে দান করেছেন। (নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ১৬৬৬)
মিলাদ বিদ্বেষীরা অভিযোগ করে এ দিন উম্মত হিসেবে রোজা না রেখে মিলাদ আয়োজন করা, জশনে জুলুস বের করা, সভা-সেমিনার আয়োজন করা, আলোক সজ্জা করা, তাবাররুক বিতরণ করা ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করা বিদআত। এসব জ্ঞান পাপীদের উপরোক্ত বক্তব্য, মন্তব্য অজ্ঞতা ও মূর্খতার পরিচায়ক। অথচ নবীজি রাহমাতুল্লীল আলামীন হিসেবে শুভাগমনের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ খুশী, আনন্দ উদযাপন করা মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনের অনুসরণ। যেমন জুমার দিনকে ঈদের দিন বলা হয়েছে এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় জুম’আর দিন হল ঈদের দিন, তোমরা ঈদের দিনকে রোজার দিন করোনা। তোমরা এর আগে বা পরের দিন রোজা রাখ। (নাসায়ী শরীফ: ১৬৬৬)
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার শুভাগমনের মাসে ও দিনে নফল নামায আদায় করা, দান সাদকা করা, স্মরণ সভা, আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মিলাদুন্নবী, জশনে জুলুছ, আলোকসজ্জা, শোভাযাত্রা, খানা পিনার আয়োজন, মিষ্টান্ন বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচী পালন করা এবং তাঁর স্মরণে খুশি উদযাপন করা আল্লাহর ও রাসুলের আনুগত্য বৈ কি? পক্ষান্তরে এর বিরোধিতা অকৃতজ্ঞতার পরিচায়ক।

নবীজির শুভাগমন বিশ্ববাসীর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত: মহীয়ান ¯্রষ্টা বিশ্ববাসীর প্রতি তাঁর প্রিয় হাবীব রা‏হ্মাতুল্লীল আলামীনের প্রেরণকে মহান আল্লাহর সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত বলে অভিহিত করেছেন, এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমীনদের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন, যেহেতু তিনি তাদের মধ্যে তাদেরই কল্যাণ্যার্থে একজন সম্মানিত রসুল প্রেরণ করেছেন। (সূরা: ৩, আলে ইমরান, পারা ৪, আয়াত: ১৬৪)
ঈমানদারদের উপর সর্বোত্তম নিয়ামত প্রেরণ করে তাদেরকে ধন্য ও কৃতার্থ করেছেন। সুতরাং ঈমানদার মাত্রই সকলের উপর এ নিয়ামতের যথার্থ মূল্যায়ন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অবশ্যই কর্তব্য। বিশেষত ঃ যে মাসে যে দিনে এ মহান অনুগ্রহ দান করেছেন সে মাসে সেদিনে এ নিয়ামতের আলোচনা করা স্রষ্টার নির্দেশেরই অনুগামিতা। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের বহুস্থানে খোদাপ্রদত্ত নিয়ামতের আলোচনা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং বিভিন্নভাবে এ নিয়ামতের যথার্থ স্মরণ করার নির্দেশ করেছেন। বিশেষতঃ সুরা দোহায় এরশাদ করেছেন,আপনার পালন কর্তার নিয়ামতের র্চচা করুন।(পারা-৩০ রুকু ১৮)
অতঃপর আল্লাহ পাক নিয়ামতের অবমূল্যায়ন ও অস্বীকারকারীদের পরিণতি সম্পর্কে এরশাদ করেছেন আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা অকৃতজ্ঞ হয়ে আল্লাহর নিয়ামতকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।(পারা ১৩ রুকু ১৭) বোখারী শরীফ ও অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থ সমূহে মুফাসসিরকুল শিরোমনি হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস ও হযরত ওমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, একমাত্র কাফিররাই আল্লাহর নিয়ামতের অকৃতজ্ঞ হতে পারে। আয়াতে বর্ণিত “নিয়ামাতুল্লাহ” দ্বারা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে বুঝানো হয়েছে।( বুখারী শরীফ ৩য় অধ্যায় ৬পৃষ্ঠা)
আরব বিশ্বে মীলাদুন্নবী উদযাপন: মিলাদুন্নবী ইসলামী ঐক্যের প্রতীক, ইসলামী ঐতিহ্যের স্মারক। ইসলামী সংস্কৃতির এক গৌরবময় ও বরকতময় আমল, হাজার বৎসর ধরে পৃথিবীর দেশে দেশে এ ধারা আবহমান কাল থেকে প্রচলিত। মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র সমাদৃত। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম ইবনে জওযী (৫১০-৫৭৯হি.) বর্ণনা করেন, সর্বদা মক্কা মদীনায়, মিশর, ইয়েমেন, সিরিয়া, এমনকি পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত সমগ্র আরববাসীরা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মাহফিল আয়োজন করে আসছেন, রবিউল আউয়াল শরীফের নবচন্দ্র উদিত হলে তারা খুশী, আনন্দে উদ্বেলিত হয় এবং বিশেষ গুরুত্বসহকারে মিলাদ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে থাকেন এতে তাঁরা অসংখ্য সওয়াব ও মহা সাফল্য অর্জন করে থাকেন। (আল্লামা ইমাম ইবনে জওযী ৫৭৯হি. কর্তৃক বিরচিত মীলাদুন্নবী)
সর্বদা মুসলমানরা রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিল উদযাপন করে আসছে, তারা দান সাদকা, কল্যাণধর্মী কার্যক্রম ও খুশী উদযাপন করে থাকে। তারা ঐ দিন উত্তম পূণ্যময় কাজের চেষ্ঠা করে এবং নবীজির শানে মিলাদ পাঠের ব্যবস্থা করে থাকে। (মাছাবাতা বিস সুন্নাহ, পৃ: ৬০)
হে আল্লাহ! ঈদে মিলাদুন্নবীর এ মহান দিবসে আমাদেরকে আপনার ভালবাসা ও আপনার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন।

অনুতপ্তকারীকে আল্লাহ ক্ষমা করেন
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : দুনিয়ার জীবন মানুষের জন্য পরীক্ষাক্ষেত্র। শয়তান ও নফসে আম্মারা বা কুপ্রবৃত্তি মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করার জন্য অনবরত চেষ্টা করতে থাকে। সুস্থ বিবেকের অধিকারী কেউ মূলত খারাপ হতে চায় না। আল্লাহর যা অপরাধ বা গুনাহ গণ্য করেছেন, তা প্রত্যেকটা সুস্থ বিবেকের কাছেই খারাপ কাজ। এরপরও প্রবৃত্তির তাড়নায় ও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ খারাপ কাজ করে ফেলে।

আল্লাহর অনেক বড় রহমত যে তিনি বারবার গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করেন। গুনাহগার যখনই যথাযথভাবে লজ্জিত হয়, গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং তওবা করে, তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। কোরআনের অনেকগুলো আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন তিনি গাফুর ও রাহিম অর্থাৎ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। গুনাহ করে ফেললে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করে সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আল্লাহ বলেন,

বলো, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা জুমার: ৫৩)

হাদিসে এসেছে, বান্দা কোনো একটি গুনাহ করে যখন ক্ষমা চায়, আল্লাহ ক্ষমা করেন। পরবর্তীতে বার বার গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়লেও বান্দা যদি লজ্জিত হয় এবং ক্ষমা চায়, তাহলে আল্লাহ রাহমানুর রাহিম, পরম দয়ালু ও মেহেরবান বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।

আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, আমি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে শুনেছি, এক বান্দা গুনাহ করে তারপর সে বলে, হে আমার রব! আমি তো গুনাহ করে ফেলেছি। আমার গুনাহ মাফ করে দিন। তার রব বলেন, আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।

তারপর সে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুকাল গুনাহমুক্ত থfকে। এরপর সে আবার গুনাহে লিপ্ত হয়। বান্দা আবার বলে, হে আমার রব! আমি তো আবার গুনাহ করে বসেছি। আমার এ গুনাহ আপনি ক্ষমা করে দিন। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার বান্দার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি।

এরপর সে বান্দা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে। আবারও সে গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়। এখানে সে বলে, হে আমার রব! আমি তো আরো একটি গুনাহ করে ফেলেছি। আমার এ গুনাহ ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা জেনেছে যে, তার একজন রব রয়েছেন, যিনি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং গুনাহের কারণে শাস্তিও দেন। আমি আমার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এ রকম তিনি তিনবার বললেন। (সহিহ বুখারি: ৭৫০৭)

তাই বার বার গুনাহ হয়ে গেলেও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। বান্দা যদি সত্যিকারভাবে অনুতপ্ত হয় এবং ক্ষমা চায়, তাহলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।

গুনায় রিজিক কমে
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : কোরআনে আল্লাহ তার নবি নুহের (আ.) ঘটনায় উল্লেখ করেছেন, নুহ (আ.) তার জাতিকে বলেছিলেন, তোমরা আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করো, ইস্তিগফারের বরকতে আল্লাহ বৃষ্টি দান করবেন, তোমাদের সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে বরকত দান করবেন। আল্লাহ বলেন,

আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা। (সুরা নুহ: ১০-১২)

অর্থাৎ গুনাহমুক্তির ফলে ইস্তিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে পরকালের নেয়ামত তো রয়েছেই, দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহ বরকত দান করেন। দুনিয়ার সুখ-সমৃদ্ধি, ধন-সম্পদ ও উত্তম সন্তান-সন্ততি দান করেন।

বিপরীতে গুনাহ করলে মানুষ রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়। উত্তম সন্তান-সন্ততি থেকেও বঞ্চিত হয়। গুনাহের আখেরাতের শাস্তি তো রয়েছেই, দুনিয়াতেও গুনাহ আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়। সাওবান (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

দোয়া ছাড়া আর কিছুই ভাগ্য পরিবর্তন করে না, নেক কাজ ছাড়া আর কিছুই আয়ু বাড়ায় না এবং পাপ ছাড়া আর কিছুই মানুষকে রিজিক থেকে বঞ্চিত করে না। (সুনানে ইবনে মাজা: ৪০২২)

অর্থাৎ দোয়ার মাধ্যমে মানুষের তাকদীরে মুআল্লাক বা কাজ সংশ্লিষ্ট ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারে, নেক কাজ করলে হায়াত বৃদ্ধি পেতে পারে বা জীবন বরকতময় হতে পারে এবং গুনাহ করলে মানুষ রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।

তাই কোনো গুনাহে জড়িয়ে পড়লে যত দ্রুত সম্ভব ওই গুনাহ থেকে বিরত হোন এবং তওবা করুন। মানুষ যখন গুনাহ করে, আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, তখন সে দুর্ভাগ্য, আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও জাহান্নামের পথে এগিয়ে যায়। গুনাহের জন্য অনুশোচিত হয়ে ইস্তেগফার করলে, আল্লাহর পথে ফিরলে আল্লাহ দুনিয়ার জীবনে রহমত ও বরকত দান করেন, রিজিক বৃদ্ধি করে দেন। আখেরাতেও তার জন্য রয়েছে ক্ষমা ও জান্নাত।

আজ পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা
                                  

আজ বুধবার পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা। মহানবী (সা.)-এর রোগমুক্তি দিবস। প্রতিবছর হিজরি সালের সফর মাসের শেষ বুধবার মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্মারক দিবস হিসেবে পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা উদযাপিত হয়।

এদিকে পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা উপলক্ষে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বাদ জোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন মাদারীপুর টেকেরহাটের হযরত মাওলানা মো. কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অতিরিক্ত সচিব ড. মহা. বশিরুল আলম।

জানা গেছে, ২৩ হিজরির শুরুতে মহানবী (সা.) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইমামতি পর্যন্ত করতে পারছিলেন না তিনি। ২৮ সফর মহানবী (সা.) সুস্থ হয়ে ওঠেন। দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার। ওই দিন শেষবারের মতো গোসল করে নামাজে ইমামতি করেন তিনি। তার সুস্থতার খবরে সাহাবিরা উচ্ছ্বসিত হয়ে হাজার হাজার স্বর্ণমুদ্রা, বহু উট ও দুম্বা দান করেন। তবে পরদিন আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন মহানবী (সা.)।

ফারসিতে দিনটিকে আখেরি চাহার সোম্বা নামে অভিহিত করা হয়। ফারসি শব্দমালা আখেরি চাহার সোম্বা অর্থ শেষ চতুর্থ বুধবার। মহানবী (সা.) জীবনে শেষবারের মতো রোগমুক্তি লাভ করেন বলে দিনটিকে মুসলমানরা প্রতিবছর ‘শুকরিয়া দিবস’ হিসেবেও উদযাপন করে। তারা নফল ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দিবসটি অতিবাহিত করে। তাই উম্মতে মুহাম্মদির আধ্যাত্মিক জীবনে আখেরি চাহার সোম্বার গুরুত্ব ও মহিমা অপরিসীম।

নামাজ আদায়ের সময় দৃষ্টি কোথায় রাখবেন?
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : নামাজ আদায়ের সময় এদিক-ওদিক তাকানো নিষিদ্ধ। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা এক ধরণের ছিনতাই। এভাবে শয়তান বান্দার নামাজের অংশবিশেষ কেড়ে নেয়। (সহিহ বোখারি) অর্থাৎ নামাজের কিছু অংশের সওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হয়ে যায়।

আবার নামাজে চোখ বন্ধ রাখাও সুন্নতের খেলাফ। বড় কোনো অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতা না থাকলে চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া মাকরূহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায়, সে যেন তার দুই চোখ বন্ধ করে না রাখে। (মু’জামে তাবরানি)

তাই নামাজে চোখ খোলা রাখতে হবে, একইসাথে এদিক-ওদিক তাকানো থেকেও বিরত থাকতে হবে। নামাজে দৃষ্টি কখন কোথায় রাখতে হবে এ ব্যাপারে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার জায়গায় রাখতে হবে, রুকু অবস্থায় রাখতে হবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় রাখতে হবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় রাখতে হবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসুত)

এটিই হলো যথাযথ ও সুন্নত পদ্ধতি। এভাবে দৃষ্টি নত রেখে নামাজ আদায় করলেই নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা যায়। চোখ বন্ধ রাখার প্রয়োজন পড়ে না।

তবে যদি কেউ এমন জায়গায় এমন পরিস্থিতিতে নামাজ পড়তে বাধ্য হয়, যেখানে চারপাশে বা সামনে এমন কিছু আছে বা ঘটছে যে চোখ খোলা রাখলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন, তাহলে চোখ বন্ধ রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত চোখ বন্ধ রেখে নামাজ পড়া এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করা যাবে না।

নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করা। তিনি যেভাবে নামাজ পড়েছেন, বা যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে নামাজ পড়া। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা নামাজ আদায় করো যেভাবে আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখছো। (সহিহ বুখারি)

বন্যার সময় যে দোয়া পড়বেন
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : অতিবৃষ্টি, বন্যা, প্লাবনসহ যে কোনো প্রাকৃতিকর দুর্যোগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় মহান আল্লাহ তাআলার শক্তি ও ক্ষমতার কথা, আমাদের ‍দুর্বলতা, হীনতা ও মুখাপেক্ষিতার কথা। তাই এ সব দুর্যোগ ও বিপদের সময় আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত। আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ বলেন,

আর আমি তোমাদের আগের জাতিসমূহের কাছে বহু রাসুল পাঠিয়েছি, আমি তাদের ওপর ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও রোগ ব্যাধি চাপিয়ে দিয়েছি, যেন তারা নম্রতা প্রকাশ করে আমার সামনে নতি স্বীকার করে। তারা কেন বিনীত হয়নি, যখন তাদের ওপর আমার আজাব আসল? কিন্তু তাদের হৃদয় নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছে। আর তারা যা করত, শয়তান তাদের জন্য তা শোভিত করেছে। তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, আমি তাদের উপর সব কিছুর দরজা খুলে দিলাম। অবশেষে যখন তাদেরকে যা প্রদান করা হয়েছিল তার কারণে তারা উৎফুল্ল হল, আমি হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। তারা তখন হতাশ হয়ে গেল। (সুরা আনআম: ৪২-৪৪)

বন্যা, প্লাবন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আল্লাহর রাসুলের (সা.) শেখানো এ দোয়াটি আমরা পড়তে পারি,

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগাদাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআযাবিকা, ওয়া আফিনা কাবলা যা-লিকা।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ আপনার গজব দিয়ে আমাদের মেরে ফেলবেন না, আপনার শাস্তি দিয়ে আমাদের নিশ্চিহ্ন করবেন না, তার আগেই আমাদের ক্ষমা করে দিন।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বজ্রধ্বনি ও মেঘের গর্জন শুনলে এ দোয়াটি পড়তেন। (সুনানে তিরমিজি)

বন্যা বা প্লাবনের সময় আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার জন্যও দোয়াটি উপযোগী।

পরিমিত ও উপকারি বৃষ্টি আল্লাহর রহমতের নিদর্শন। উপকারি বৃষ্টি প্রার্থনা করে আল্লাহর রাসুল দোয়া করেছেন। কিন্তু অতিবৃষ্টি বা যে বৃষ্টি মানুষের জন্য ক্ষতিকর, যে বৃষ্টিতে মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে যায়, ফসল নষ্ট হয়, এ রকম বৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্যও আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দোয়া করেছেন। হাদিসে এসেছে, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার অতিবৃষ্টির সময় দোয়া করেছিলেন,

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা
অর্থ: হে আল্লাহ আমাদের আশপাশে (জনবসতির বাইরে) বৃষ্টি দাও, আমাদের ওপর নয়। (সহিহ বুখারি: ৯৩৩)

কবর জিয়ারতের সময় যে দোয়া পড়বেন
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : কবর জিয়ারত করা, কবরস্থানে গিয়ে মৃত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করা সুন্নত ও সওয়াবের কাজ। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাঝে মাঝেই সাহাবিদের কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করতেন, কবরবাসীদের জন্য দোয়া করতেন।

কবরস্থানে গিয়ে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ ও শরিয়ত-নিষিদ্ধ কাজকর্ম ঠেকাতে একবার রাসুল (সা.) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর। কারণ কবর জিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৫৭১)

কবর জিয়ারত করতে গিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরবাসীকে সালাম দিয়ে দোয়া করতেন। সাহাবিদেরও তিনি সালাম দিয়ে দোয়া করতে শিখিয়েছেন। বুরায়দাহ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরস্থানে গেলে এ দোয়া পড়তে শিখিয়েছেন,

অর্থ: হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আমরা আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। (সহিহ মুসলিম: ৯৭৫)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনার কবরস্থান হয়ে যাচ্ছিলেন, এ সময় তাদের দিকে মুখ করে বললেন,

অর্থ: হে কবরবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বৰ্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন, (পরকালের যাত্রায়) তোমরা আমাদের আগে গেছ আর আমরাও তোমাদের অনুসরণ করবো। (সুনানে তিরমিজি: ৫৯৬)

জানাজার নামাজে মৃতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দোয়া করেছিলেন,

অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করে দিন, তার ওপর করুণা করুন, তাকে শক্তি দিন এবং তাকে রেহাই দিন। তার উপর সহৃদয় হোন এবং তার জন্য উত্তম অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করুন এবং তাকে পানি, বরফ ও তুষার দ্বারা ধৌত করে দিন। তার গুনাহসমূহ পরিস্কার করে দিন যেভাবে সাদা কাপড় দাগমুক্ত করে ধৌত করা হয়। সে যে ধরণের আবাসের সঙ্গে পরিচিত তার থেকে তাকে উত্তম আবাস দিন এবং যে ধরনের পরিবারের সঙ্গে পরিচিত তার থেকে উত্তম পরিবার দিন এবং তার স্ত্রীর চেয়ে উত্তম স্ত্রী দিন। তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং কবরের ফিতনা থেকে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাকে রক্ষা করুন। (সহিহ মুসলিম: ৯৬৩)

এ দোয়াটিও কবর জিয়ারত করতে গিয়ে পড়া যায়। এ ছাড়া কোরআন হাদিসে উল্লিখিত অন্যান্য দোয়াও পড়া যায়। নিজের ভাষায়ও ‍মৃতের আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা করে দোয়া করা যায়।

ইসলাম ন্যায় ও ইনসাফ শিক্ষা দেয়
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : ইসলাম জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা অনুমোদন করে না। শুধু জাতি বা গোষ্ঠী পরিচয়ের কারণে কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যেমন স্বাভাবিক ন্যয়বোধ বিরোধী, ইসলামের শিক্ষা ও চেতনারও বিরোধী। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

প্রতিটি ব্যক্তি যা অর্জন করে, তা শুধু তারই উপর বর্তায় আর কোন ভারবহনকারী অন্যের ভার বহন করবে না। (সুরা আনআম: ১৬৪)

অর্থাৎ প্রত্যেকটা মানুষের অর্জন বা ভালো কাজের কৃতিত্ব যেমন তার, তার অন্যায় কাজের দায়-দায়িত্বও তার। একজনের অপরাধের দায় আরেকজন বহন করবে না। তাই একজনের অপরাধে আরেকজনকে শাস্তিও দেওয়া যাবে না।

কোনো দল বা গোষ্ঠীর কিছু মানুষ যদি অপরাধ করে, তাহলে অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ওই পুরো দল বা গোষ্ঠীকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সবাইকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। যে কারো ওপর আক্রমণ করা যাবে না। বিদায় হজের ভাষণে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্মদ ও তোমাদের ইজ্জত-সম্মানে হস্তক্ষেপ তোমাদের ওপর হারাম, যেমন তোমাদের এ দিনে এ শহরে ও এ মাসে তা হারাম। জেনে রেখ! অপরাধীই অপরাধ কর্মের জন্য দায়ী ও দোষী। ছেলের অপরাধের জন্য বাবা এবং বাবার অপরাধের জন্য ছেলে অপরাধী নয়। (সুনানে তিরমিজি)

তাই যে কোনো পরিস্থিতিতেই কোনো দল বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ঘৃণা ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। সবাইকে অপরাধী সাব্যস্ত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

নিরপরাধ মানুষ হত্যা বড় পাপ
ইসলামে বড় অপরাধ ও পাপসমূহের একটি হলো নিরপরাধ মানুষ হত্যা বা খুন। মানুষের হক সম্পর্কিত সবচেয়ে বড় অপরাধ এটি। ইসলামে মানুষ হত্যা দুনিয়াতে দণ্ডণীয় অপরাধ, এর শাস্তি ভোগ করতে হবে আখেরাতেও। একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার অপরাধ কত ভয়াবহ তা ফুটে ওঠে এ আয়াতে, আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করলো সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে একজন মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন সব মানুষকে বাঁচালো। (সুরা মায়েদা: ৩২)

নতুন সরকারের কাছে যে প্রত্যাশার কথা জানালেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
                                  

ছাত্র-জনতার রোষের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে শেখ হাসিনা। তার পালিয়ে যাওয়ার তিনদিন পর অবশেষে গঠিত হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এতে আলেম প্রতিনিধিসহ জায়গা পেয়েছেন ১৭জন।


সরকার গঠনের এই প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী আলোচক শায়খ আহমদুল্লাহ। একইসঙ্গে আলেম প্রতিনিধি আ ফ ম খালিদ হোসেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।

নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হলো। আমি এই সরকারের সাফল্য কামনা করছি।

তিনি বলেন, সর্ব-প্রকার জুলুম, অরাজকতা, চাঁদাবাজি এবং অপশাসনের অবসান হোক, এদেশের সকল ধর্মের মানুষ ভালো ও নিরাপদ থাকুক, নতুন সরকারের কথায় ও কাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটুক—এই প্রত্যাশা তাদের প্রতি।

আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আলেমদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হলেন সিনিরয় আলেম প্রিয় মানুষ ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন। মহান আল্লাহ তাঁর কাজ সহজ করে দিন এবং তাঁকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার আগে অনেকেই শায়খ আহমাদুল্লাহ নাম প্রস্তাব করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমার অযোগ্যতা সত্ত্বেও আপনারা অনেকে গত দু`দিন থরে আমার নাম প্রস্তাব করেছেন এবং আমার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন; যার উপযুক্ত আমি ছিলাম না—তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। মহান আল্লাহ আপনাদের ভালোবাসা ও সুধারণার উত্তম বিনিময় দান করুন।

সর্বশেষ তিনি বলেন, নতুন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তার কতটুকু তারা পূরণ করতে পারবে সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে দোয়া করি, প্রিয় মাতৃভূমি ভালো থাকুক। নিরাপদ থাকুক আমাদের জীবন, সম্পদ, দীন ও ঈমান।

আজ পবিত্র আশুরা
                                  

আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূণ পরিবেশে নানা-কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত হবে।

কারবালার ‘শোকাবহ এবং হৃদয় বিদারক ঘটনাবহুল’ এই দিনটি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে মুসলিম বিশ্বে এ দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে বুধবার সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে। এছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যম এবং স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এই দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে।

পবিত্র আশুরা ১৪৪৬ হিজরি উপলক্ষ্যে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে আজ বাদ যোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ও তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব শাইখুল হাদিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ ও আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মো. ইমরান নূরুদ্দীন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আনিছুর রহমান সরকার। এছাড়া অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মুসল্লিরা উপস্থিত ছিলেন।

দিবসটি উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, পবিত্র আশুরা সমগ্র মুসলিম উম্মা’র জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকের দিন।

রাষ্ট্রপতি পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) সহ কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণকারী সব শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় হিজরি ৬১ সনের ১০ মহরম হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহিদ হন। ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তাদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসে চিরদিন সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী আমাদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা যোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে চলার।

পবিত্র আশুরার মহান শিক্ষা সবার জীবনে প্রতিফলিত হোক-এ প্রত্যাশা করেন রাষ্ট্রপতি।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। সব ধর্মই হানাহানি, হিংসা, দ্বেষ ও বিভেদ ভুলে মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করে।

তিনি পবিত্র আশুরার এই দিনে সাম্য, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মা’র ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে পবিত্র আশুরার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ইসলামের ইতিহাসে এই মর্মন্তুদ বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও হিজরি সালের মহরম মাসের ১০ তারিখ নানা কারণে ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ।

সরকার প্রধান বলেন, বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র আশুরার দিনে রোজা রাখা সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করতেন। এই দিনে তিনি নিজে রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের রোজা রাখার পরামর্শ দিতেন। মহান আল্লাহ এই দিনে সমস্ত পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র আশুরার দিনে অনেক নবী, রাসুল ও আল্লাহ’র প্রিয় বান্দাগণ তার নৈকট্য ও সাহায্য লাভ করে কঠিন বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। সে হিসেবে, আমি বিশ্বাস করি, এ দিনে বিশেষ নেক আমল মানব জাতির জন্য অনেক কল্যাণ বয়ে আনবে।

তিনি বলেন, আসুন আমরা যে যার অবস্থান থেকে কল্যাণকর কাজে অংশ নিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ ‘সোনার বাংলাদেশ’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে নিবেদিত হই।

এতে তিনি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ দেশে ও প্রবাসে পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে আয়োজিত সব অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

ইরাকের কারবালা ইমাম হোসইনের রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : ইসলামের পুনর্জাগরণ হয় প্রতিটি কারবালার পরই। যে ইতিহাস রক্তঝরা ইতিহাস, যে ইতিহাস ভূবন কাঁদায়, যে ইতিহাস সত্যের পথে লড়াইয়ের শক্তি জোগায়, শিরায় উপশিরায় ইসলামের প্রতি ভালোবাসাকে জাগিয়ে তুলে। জালিমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চেতনা জাগায়। কী ঘটেছিল সেদিন কারবালার প্রান্তরে? নবী দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর সঙ্গে কী আচরণ করেছিল ইসলামের চির শক্র ইয়াজিদ বাহিনী? বড়ই মর্মম এ ইতিহাস। বড়ই করুণ সে গল্প। এটি মুসলিম জাতির হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ও বেদনাদায়ক ঘটনা। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) মহানবীর হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম এর প্রিয় দৌহিত্রই ছিলেন না শুধু, ছিলেন তার আদর্শের প্রতীকও। আর সে জন্যই তিনি ইয়াজিদের সঙ্গে আপস করেননি। বরং তার স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দীনের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে প্রমাণ করে গেছেন ‘শির দিবো তবু ইয়াজিদের কাছে মাথা নত করবোনা। ৬১ হিজরি সনের ১০ মহররম কারবালার যুদ্ধ সংঘটিতে হয়েছিল।আজ ৯ মহররম ১৪৪৬ হিজরি, ১৬ জুলাই মঙ্গলবার। আর সেদিনই ১০ মহররম কারবালার ময়দানে শাহাদাত বরণ করেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, চরিত্রহীন ইয়াজিদ যখন ক্ষমতালিপ্সু ক্ষমতার জোরে সত্য-ন্যায়ের মসনদে চেপে বসেছিল, তখন সমাজ ছেয়ে গিয়েছিল অনাচারের বিষবাষ্পে। ইয়াজিদ ভুলে গিয়েছিল তাকওয়া-তাহারাত। খোদাভীতি ও ইবাদত। সে খোদার বিধানকে তোয়াক্কা না করে লিপ্ত হয়েছিল বেগানা নারীগমনে। অসহায়দের সেবার পরিবর্তে সে খুলেছিল আমোদ-প্রমোদের দুয়ার।তার এসব কার্যকলাপে কুফার লোকেরা অসন্তুষ্ট হয়ে ইমাম হোসাইনের (রা.) এর কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানালো যে, তারা মুসলিম জাহানের ইমাম হিসেবে ইয়াজিদকে নয়, হযরত হোসাইন (রা.) কেই চায়। তাদের চিঠি পেয়ে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) কুফার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকীলকে (রা.)-কে পাঠালেন। হযরত মুসলিম (রা.) কুফায় এসে দেখলেন ঘটনা সত্য। এখানকার অধিকাংশ লোকই হযরত হোসাইন (রা.)-কে খলিফা হিসেবে চাচ্ছেন। তিনি দ্রুত সেই খবর ইমাম হোসাইনকে (রা.)-কে জানালেন।

এক মুনাফিকের মাধ্যমে এ খবর ইয়াজিদের কাছে পৌঁছলে সে কুফার গভর্নর নোমান বিন বাশিরকে বরখাস্ত করে তার জায়গায় উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে বসান। আর বলে দিল, ‘তুমি বসরার গভর্নর, পাশাপাশি কুফারও গভর্নর। অতএব, তুমি মুসলিম বিন আকীলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করো।’ ইবনে যিয়াদ ছিল ক্ষমতালোভী ও কঠোর প্রকৃতির লোক। সে কুফায় এসেই মুসলিম (রা.) এর হাতে বায়াত হওয়া অনুসারীদের থেকে নেতৃস্থানীয়দের গ্রেফতার করা শুরু করে। এ অবস্থায় হজরত মুসলিম (রা.) সবার সঙ্গে পরামর্শ করে গভর্নর ভবন ঘেরাও করলেন। সেদিন অবস্থা এমন হয়েছিল যে, তিনি ইশারা দিলেই গভর্নর ভবন ধূলিসাৎ হয়ে যেত। অবস্থা বেগতিক দেখে চতুর যিয়াদ ফন্দি করে বন্দিদের বলে যে, তোমরা গভর্নর ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে বলো, তারা যদি ঘেরাও প্রত্যাহার না করে তবে তোমাদের জবাই করে হত্যা করা হবে। বন্দিরা প্রাণ বাঁচাতে তা-ই করল। তাদের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই হযরত মুসলিমের (রা.) এর হাতে বাইয়াত হওয়া ৪০ হাজার অনুসারী আলোর পথ ছেড়ে অন্ধকারে তলাতে লাগল। আর এ সুযোগ পেয়ে ইবনে যিয়াদ সত্যের বাহক হযরত মুসলিম (রা.)-কে গ্রেফতার করে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ করে ফেলে।এদিকে হযরত হোসাইন (রা.) তার স্ত্রী-পুত্র, আত্মীয়স্বজন, এমনকি দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ প্রায় ৭৩-৭৪ জনের একটি কাফেলা নিয়ে মক্কা শরিফ থেকে কুফার দিকে রওনা হন। মাঝপথে এসে চাচাতো ভাই মুসলিম (রা.) এর শহীদ হওয়ার সংবাদ পেলেন। কিন্তু তিনি যে ভীরু নন। তিনি তো আসাদুল্লাহিল গালিব, আলী ইবনে আবী তালিবের রক্ত। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম এর আদর্শের রক্ষাকবচ। তাই তিনি ভয়ে পিছপা হলেন না। বরং বীরবিক্রমে সামনে অগ্রসর হলেন। অতঃপর কুফা থেকে দু’মঞ্জিল দূরে কারবালা প্রান্তরে তাঁবু টানালেন। অসত্যের মূলোৎপাটনে সত্যের তলোয়ার ধরলেন। শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ।
কিন্তু হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর বাহিনীর লোকজন কম হওয়ায় তারা শহিদ হতে শুরু করলেন। অপর দিকে শত্রুরা ইমাম হোসাইনের পবিত্র বদনে বৃষ্টির মতো তীর-বর্শা নিক্ষেপ করতে থাকে। আঘাতে আঘাতে তিনি রক্তে রঞ্জিত হলেন। একসময় আঘাত সহ্য করতে না পেরে ঘোড়া থেকে জমিনে পড়ে গেলেন। তখন নির্দয় সিমারের নির্দেশে জাহান্নামি সেনা ইবনে আনাস নখয়ী হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর মাথা মোবারক শরীর মোবারক থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আহা! কী হৃদয়বিদারক ছিল ইমাম হোসাইন (রা.) এর সেই শাহাদাত। যা আজও পৃথিবীতে ত্যাগ ও সত্যের পক্ষ্যে লড়াইয়ে অমর হয়ে আছে।কারবালার শিক্ষা: সেদিন হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদের বশ্যতা মেনে নিলে হয়তো তিনি ও তার পরিবার বেঁচে যেতেন। কিন্তু মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম এর দাঁত ভেঙে যাওয়ার বিনিময়ে পাওয়া দ্বীন ও ধর্মের কী হতো? সেদিন যদি তিনি নীরবে সব মেনে নিতেন, তাহলে এই তচৌদ্দ বছর পর এসে আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম রেখে যাওয়া এই অক্ষুণ্ণ দ্বীনকে পেতাম কি? তিনি তো মুসলিম জাতিকে শিখিয়ে গেছেন অন্যায়ের প্রতিবাদ জীবন দিয়ে হলেও করতে হয়। না হলে পরবর্তী সময়ে দুঃশাসকদের ব্যাপারে আমরাও হতাম নীরব সমর্থক। কেননা তখন তো আর আমাদের সামনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইমাম হোসাইনের (রা.) দৃষ্টান্ত থাকত না। থাকত না মাথা উঁচু করার সাহস। দহনে দহনে অঙ্গার হয়ে গেলেও আমাদের মনোভাব হতো, এটাই বুঝি হওয়ার ছিল। কিন্তু হযরত হোসাইন (রা.) তা হতে দেননি। তিনি বিশ্ব মুসলিমের জন্য এই শিক্ষাই রেখে গেলেন যে, অযোগ্য ও অসৎ ব্যক্তির অন্ধ আনুগত্য চলবে না। নিরব থাকাও চলবে না। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, বিশ্ব মুসলিম আজ হযরত ইমাম হোসাইনের (রা.) এ শিক্ষা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। আর সে জন্যই আজ পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে দেখছি মুসলিমদের হাহাকার। শুনছি দীর্ঘ নিঃশ্বাস।কারবালার যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এতই বিস্তৃত যে, তা স্থান ও কালপাত্র অতিক্রম করে বর্তমান সময়ে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) বলেছেন, ‘আমি সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানের উদ্দেশ্যে সংগ্রামে নেমেছি।’ সে হিসেবে বলা যায়, হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) নৈতিক ও মানবীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যেই এই আন্দোলন ও যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
কারবালার যুদ্ধে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীরা ধৈর্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। কারবালায় শাহাদতের কয়েক দিন আগে থেকেই তিনি সঙ্গীদের ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দিয়ে আসছিলেন। মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরতা ও তার প্রতিশ্রুত পুরস্কারপ্রাপ্তির আশায় তার সঙ্গীরাও এ ব্যাপারে ছিলেন দৃঢ়চিত্ত। হযরত হোসাইন (রা.) এর সঙ্গীরা কারবালার ময়দানে আনুগত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।যুদ্ধের আগের রাতে তিনি সঙ্গীদের লক্ষ্য করে বলেন, যার ইচ্ছা সে চলে যেতে পারে। কারণ, তার সঙ্গে থাকার অর্থ হচ্ছে নির্ঘাত মৃত্যু। কিন্তু সঙ্গীরা আনুগত্যের শপথ করে তাকে ত্যাগ করবেন না বলে ঘোষণা দেন। মুসলিম ইবনে উজ্জাহ নামে এক সঙ্গী বলেন, ‘আমাকে যদি একবার হত্যা করে পুনরায় জীবিত করা হয় এবং ৭০ বার এ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়, তবুও আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না। আমি নিজের জীবন দিয়ে আপনাকে রক্ষার চেষ্টা করব, যাতে কিয়ামতের ময়দানে বিশ্বনবী হল -কে বলতে পারি, নিজের অস্তিত্ব দিয়ে আমি আপনার বংশধরকে রক্ষার চেষ্টা করেছি!’
কারবালার ময়দানের এসব ঘটনা প্রমাণ করে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীরা পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর আরো কাছে পৌঁছতে সচেষ্ট ছিলেন। শত্রু শিবিরকে উপদেশ দান অথবা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীরা বিন্দুমাত্র মানবীয় ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ বিসর্জন দেননি। তার শিবিরে যখন পানি ছিল, তখন তিনি পিপাসার্ত শত্রুসেনাদের তৃষ্ণা মেটাতে কার্পণ্য করেননি। আবার যুদ্ধের ময়দানে চরম সাহসিকতার সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। হযরত ইমাম হোসাইনের (রা.) এ নমনীয়তা ও দৃঢ়তা প্রমাণ করে হযরত ইমাম হোসাইন অতি উচ্চ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। মানবতার মুক্তি এবং মানবীয় ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ জাগ্রত করাই ছিল হযরত ইমাম হোসাইনের (রা.) এর উদ্দেশ্য। এই মহান লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজনীয়তা কিয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না বলে ইমামের শিক্ষা মানব জাতির পাথেয় হয়ে থাকবে চিরকাল।
তাই আসুন! আমরাও কারবালার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিই। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর আদর্শে নিজেদের গড়ি। শপথ নিই পুরো পৃথিবীও যদি অসত্যের পক্ষ্যে নেয়, তবুও আমরা এ মিথ্যার মোকাবেলায় পরোয়াহীনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বো। এটাই যে কারবালার দীপ্ত শপথ। কারবালা ও আশুরা ১০ মহররম মাঝে সম্পর্ক কী? বর্তমানে দেখা যায় প্রায় সব মহল থেকে আশুরার মূল বিষয় বলে কারবালার ঘটনাকেই বুঝানো হচ্ছে। কিন্তু পবিত্র আল কোরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সঠিক নয়। ইসলাম আগমনের পূর্বেও আশুরা ছিল। আমরা হাদীস দ্বারা জানতে পেরেছি, তখন মক্কার মুশরিকরা আশুরার রোজা পালন করত তেমনি ইহুদীরা হযরত মুসা কলিমুল্লাহ (আ.) এর বিজয়ের স্মরণে আশুরার সওম পালন করত। মহান আল্লাহর রাসূল আখেরী নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম আশুরার রোজা পালন করেছেন জীবনের প্রতিটি বছর। তার ইন্তেকালের পর তার সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আশুরা পালন করেছেন। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম এর ইন্তেকালের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর হিজরি ৬১ সালে কারবালার ময়দানের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জৎ তার রাসূল হযরত মুহম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম যে আশুরা পালন করেছেন ও যে আশুরা উম্মতে মুহম্মদীর জন্য রেখে গেছেন তাতে কারবালার ঘটনার কোনো ভূমিকা ছিল না। থাকার প্রশ্নই আসতে পারেনা। কারবালার এ দুঃখজনক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সাহাবাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.), আনাস ইবনে মালেক (রা.), আবু সাঈদ খুদরী (রা.), জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.), সাহল ইবনে সায়াদ (রা.), যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.), সালামাতা ইবনুল আওকা (রা.)-সহ বহু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম জীবিত ছিলেন। তারা তাদের পরবর্তী লোকদের চেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম ও তার পরিবারবর্গকে অনেক বেশি ভালবাসতেন। তারা আশুরার দিনে কারবালার ঘটনার কারণে কোন কিছুর প্রচলন করেননি। মাতম, তাযিয়া মিছিল,কোনো কিছুরই প্রমাণ পাওয়া যায় না। কারবালায় যারা শহীদ হয়েছেন মহান আল্লাহ তায়ালা যেন তাদেরকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন ও আমাদের সকলকে মহান আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল ইজ্জৎ যেন কারবালার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের জীবনকে সুন্দর করার তাওফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমীন। ওয়া আখেরী দাওয়ানা আলহামদুলিল্লাহ রাব্বুল আলামীন। ছুম্মা আমীন।

ইরাকের কুফার পথে পরিবার পরিজনদের নিয়ে ইমাম হোসাইন (রা.)
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : হযরত হোসাইন ইবনে ইমাম হযরত আলী (রা.) পরিবার-পরিজনসহ কুফা থেকে আগত ৬০ জন মানুষের ক্ষুদ্র কাফেলা নিয়ে কুফার পথে যাত্রা শুরু করলেন।

তার কুফা যাত্রার কথা শুনে মানুষ উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হয়ে পড়লো। হিতাকাঙ্ক্ষীরা তাকে কুফায় না যাওয়ার জোর পরামর্শ দিলেন। আব্বাস (রা.) বললেন, ‘কুফাবাসী হলো বিশ্বাসঘাতকের জাত। সুতরাং তাদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে আপনি এখানেই অবস্থান করতে থাকুন, তারা যখন তাদের শত্রুকে শহর ছাড়া করবে তখন আপনি যাবেন।’

ইবনে উমর (রা.) একইভাবে তাকে নিষেধ করলেন। কিন্তু তিনি ফিরে আসতে অসম্মতির কথা জানান। এ সময় ইবনে উমর তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়েরও ইমাম হোসাইনকে নিষেধ করলেন।

আবু সাঈদ খুদরী, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ এবং সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিবও তাকে নিষেধ করলেন। পথে কবি ফারাযদাকের সঙ্গে দেখা হলে তিনি তাকে মানুষের মনোভাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। ফারাযদাক বললেন, ‘হে রাসূল তনয়! হৃদয়তো আপনার সঙ্গে কিন্তু তলোয়ার আপনার বিরুদ্ধে। তবে বিজয়ের ফয়সালা আসমানে।’ (আলী মিয়া নদভী, হযরত আলী রা: জীবনও খিলাফত, ই. ফা.বা. অনূদিত, পৃ২৫১)
পথিমধ্যে মুসলিম ইবনে আকীল এবং হানী ইবনে উরওয়ার শাহাদাতের সংবাদ পেয়ে বারবার তিনি ‘ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়তে লাগলেন। সবাই তাকে নিজেকে রক্ষা করতে বিনীত অনুরোধ জানালেন। ইমাম হোসাইন (রা.) বললেন, ‘এ দুজনের শাহাদাতের পর বেঁচে থাকায় আর কোন কল্যাণ নাই।’
হাজির অঞ্চলে পৌঁছে তিনি বললেন, আমাদের সমর্থকরা আমাদের ত্যাগ করেছে সুতরাং তোমরা যারা ফিরে যেতে চাও নিঃসংকোচে যেতে পারো। কারো উপর আমাদের পক্ষ হতে আনুগত্যের দায়বদ্ধতা নেই। এ ঘোষণার পর পথে যারা তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তারা সবাই কেটে পড়লো। শুধু মক্কা থেকে যারা এসেছিল তারাই রয়ে গেলো। হুর ইবনে ইয়াজিদ রায়াহী সহযোগীদের নিয়ে ইমাম হোসাইন থেকে পৃথক হয়ে গেলো। (ইবন কাসীর,আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ-৮,পৃ-১৬৭)
ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ উমর ইবনে সা`আদ ইবনে আবি ওয়াককাসকে হোসাইনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে পাঠালো। বিনিময়ে ইবনে জিয়াদ তাকে ইরাকের রাঈ প্রদেশের গভর্নর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মুগিরা ইবনে শু’বার (রা.) পুত্র হামযাহ উমর ইবনে সা`আদকে হুসাইনের বিরুদ্ধে লড়াই না করার অনুরোধ করেছিল এবং ভৎসনাও করেছিল।

সে কর্ণপাত না করে চার হাজার যোদ্ধা নিয়ে কারবালার প্রান্তরে হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গিদের মুখোমুখি হলো।(ইবনে আসাকির, তারিখু মদীনাতা দিমাস্ক, খ-৪৫,পৃ-৪৮)
ইমাম হোসাইন (রা.) তাকে বললেন, ‘হে উমর! আমার তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি গ্রহণ করো। হয় আমাকে যেভাবে এসেছি সেভাবে ফিরে যেতে দাও। আর তা না হলে আমাকে ইয়াজিদের কাছে পাঠিয়ে দাও। আমি তার হাতে বাইয়াত হবো। তাও যদি গ্রহণযোগ্য না মনে করো তাহলে আমাকে তুর্কী দেশে পাঠিয়ে দাও। মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো।’
প্রস্তাবগুলো ইবনে জিয়াদের বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হলো, সে তখন হোসাইনকে (রা.) ইয়াজিদের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল, তখন নরাধম শিমার ইবনে যিল জাওশান বাধা দিয়ে বলল, আপনার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কিছু গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ইবনে জিয়াদ ইমাম হোসাইনকে (রা.) এ কথা জানিয়ে দিলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর শপথ এটা আমি করবো না।’

উমর ইবনে সা`আদের সঙ্গে কুফার ৩০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিল। তারা তাকে বললো,নবী-কন্যার পূত্র তোমাদের সামনে তিনটি প্রস্তাব পেশ করেছেন আর তোমরা একটিও গ্রহণ করবে না! একথা বলে তারা হোসাইনের (রা.) সঙ্গে যোগ দিলেন। (ইবনে কাসীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,খ-৮,পৃ-১৭০)ইবনে জিয়াদ শিমার ইবনে যিল জাওশানকে এই নির্দেশ দিয়ে পাঠালো উমর যদি লড়াই করতে অনীহা প্রকাশ করে, তুমি তাকে হত্যা করে তার স্থান গ্রহণ করবে।
আরো নির্দেশ দিলো, হোসাইন ও তার সঙ্গীদল তরবারি সমর্পণ না করা পর্যন্ত পানি অবরোধ করে রাখবে, যেন তারা ফোরাত হতে এক ফোঁটা পানিও সংগ্রহ করতে না পারে।
পক্ষান্তরে হোসাইন (রা.) সঙ্গীদের নির্দেশ দিলেন, ‘ফোরাতের পানি সংগ্রহ করে নিজেরা পিপাসা নিবারণ করবে, নিজেদের ঘোড়াগুলোর সঙ্গে শত্রুদের ঘোড়াগুলোকেও পানি পান করতে দেবে।’
৯ মুহররম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীদলের দিকে অগ্রসর হলো। সেই রাত্রে হোসাইন (রা.) তার পরিবার-পরিজনকে প্রয়োজনীয় অছিয়ত করলেন এবং সাথীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করলেন। শুক্রবার সকালে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ফজরের নামাজ আদায় করলেন। সেদিন ছিলো আশুরার দিন। তার সঙ্গীদের মধ্যে ছিল ৩২ জন যোদ্ধা আর ৪০ জন পুরুষ।
ইমাম হোসাইন ঘোড়ায় আরোহন করলেন এবং একখন্ড কোরআন নিজের সামনে রাখলেন। তার পুত্র আলী ইবনে হোসাইনও ঘোড়ায় আরোহন করলেন। তিনি তখন খুব দুর্বল ও অসুস্থ ছিলেন।
হযরত হোসাইন (রা.) লোকদের সামনে আপন উচ্চ বংশ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে তাদের ধর্মানুভূতি জাগানোর চেষ্টা করে বললেন, তোমরা নিজ নিজ বিবেকের মুখোমুখি হয়ে আত্মজিজ্ঞাসা করো। আমি তো তোমাদের নবীকন্যার পুত্র।
আমার মতো মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ কি তোমাদের শোভা পায়? এরপর হুর ইবনে ইয়াজিদ তার সঙ্গে যোগ দিলেন এবং লড়াই করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন।শিমার সর্বপ্রথম আক্রমণ শুরু করে আর ইমাম হোসাইনের (রা.) সঙ্গিরা দু’জন দু’জন এবং একজন একজন করে তাদের প্রিয় ইমামের সামনে লড়াই করতে থাকে।
আর তিনি তাদের এই বলে দোয়া দিতে থাকেন, ‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠ মুত্তাকীদের শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দান করুন।’ এভাবে লড়াই করতে করতে তারা শহিদ হয়ে গেলেন। (আবুল হাসান আলী নদভী,আলী মুরতাযা রা.,পৃ-২৫৪)
মূলত ইবনে জিয়াদের বাহিনী ইমাম হোসাইনের (রা.) চারপাশে আক্রমণ করছিল, কিন্তু তার ওপর আক্রমণ করার কেউ সাহস করছিল না। শিমার তার যোদ্ধাদের হোসাইনের (রা.) ওপর আক্রমণ করার জন্য উত্তেজিত করে বলল, তাকে হত্যা করতে তোমাদের আর বাধা কোথায়?
তখন নরাধম যুরআ ইবনে শরীক তামীমী আগে বেড়ে তার কাধে তরবারি দ্বারা আঘাত করলো, আতঃপর সিনান ইবনে আনাস ইবনে আমর নাখয়ী তাকে বর্শাঘাত করলো এবং ঘোড়া থেকে নেমে ইমাম হোসাইনের মাথা কেটে নিলো। আর তা খাওলার হাতে অর্পন করলো। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন) জাফর ইবনে মুহাম্মদ বলেন, নিহত হওয়ার সময় আমরা হোসাইনের শরীরে ৩৩ টি বর্শাঘাত এবং ৩৪ টি তরবারির আঘাত দেখতে পেয়েছি।
কারবালার যুদ্ধে ঔৃইঔঔঘ হোসাইনের পক্ষে ৭২ জন শাহাদাতবরণ করেন। মুহাম্মাদ ইবন হানাফিয়া বলেন, হোসাইনের (রা.) সঙ্গে এমন ১৭ জন শহীদ হোন যারা সকলেই ছিলেন হযরত ফাতেমার (রা.) বংশধর।
ইমাম হোসাইন (রা.) ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম, শুক্রবার শহীদ হোন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর ৬ মাস ১৫ দিন। আজ সোমবার ৮ মহররম, ১৫ জুলাই ২০২৪ হিজরি। হযরত ইমাম হোসাইনের (রা.) বিরুদ্ধে যারাই অস্ত্র ধারণ করেছে এবং তার হত্যায় যাদের ভূমিকা ছিল পরবর্তীতে তাদের সকলে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল।
আল মুখতার পথভ্রষ্ট হওয়া সত্ত্বেও ইমাম হোসাইনের (রা.) ঘাতকদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করে। অবশ্যই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (ইবনে কাসীর,আল বিদায় ওয়ান নিহায়া, খ-৯,পৃ-১৮৮) হোসাইনের (রা.) বিরুদ্ধে যারাই অস্ত্র ধারণ করেছে তাদের সকলেই জঘন্যভাবে নিহত হয়েছে, কেউ পাগল হয়ে গিয়েছে। তাদের সবার আলোচনা ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার ৮ম খন্ডে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
ইবনে জিয়াদ তাওয়াবিন নামে একটি দলের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়, তার মাথাও ছিন্ন করা হয় এবং হত্যার পর তার মাথার মধ্যে সাপ ঢুকে যায়। উমর ইবনে সা`আদও নিহত হয়। ইবনে হিশামের বর্ণনা মতে ইমাম হোসাঙমইনের (রা.) ছিন্ন মস্তক যখন ইয়াজিদের দরবারে হাজির করা হলো তখন ইয়াজিদের দু’চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল। সে বলেছিলো, হোসাইনকে হত্যা করা ছাড়াও তোমাদের আনুগত্যে আমি সন্তুষ্ট হতাম। (প্রাগুক্ত,পৃ-১৯১)

মুয়াবিয়ার (রা.) জনৈক মুক্ত দাস বর্ণনা করেন, ইয়াজিদের সামনে যখন ইমাম হোসাইনের ছিন্ন মস্তক রাখা হলো তখন আমি তাকে কাঁদতে দেখেছি এবং বলতে শুনেছি,ইবনে জিয়াদ আর ইমাম হোসাইনের মাঝে রক্তসম্পর্ক থাকলে সে এটা কখনো করতে পারতো না। (প্রাগুক্ত, পৃ১৭১)
বন্দিদেরকে ইয়াজিদের সামনে আনা হলে প্রথমে সে তাদের প্রতি রুক্ষ আচরণ করে। পরে আবার কোমল আচরণ প্রদর্শন করে তাদের নিজ হেরেমে পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর তাদেরকে সসম্মানে মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ইয়াজিদ ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে তার কৃতকর্মের জন্য বরখাস্ত, সাজা বা কোনো তিরস্কারও করে নি। পক্ষান্তরে আনন্দ-উল্লাসের এমন কিছু বর্ণনা এসেছে যা কোন মুসলিমের পক্ষে শোভনীয় নয়। (আবুল হাসান আলী নদভী, আলী মুরতাযা রা.,পৃ-২৫৫)
রাজত্বভোগ করতে ইয়াজিদ মাত্র চার বছরের বেশী বেঁচে ছিল না। ৩৪ হিজরীতে কারবালার ময়দানে ও হাররার মর্মন্তুদ ঘটনার দায়ভার নিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। তার মৃত্যুর দ্বারা আবু সুফিয়ানের পরিবারের রাজত্বের অবসান হয়। সকল রাজত্বের একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আল্লাহ, তিনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন। তিনি যাকে ইচ্ছে তার নিকট থেকে রাজত্ব কেরে নেন। তিনি সর্ব শক্তিমান মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জৎ।

হযরত ইমাম হোসাইনের রক্তে রঞ্জিত কারবালা প্রান্তর
                                  

মিয়া আবদুল হান্নান : হযরত ইমাম হোসাইনের রক্তে রঞ্জিত কারবালা প্রান্তর। সত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ৬১ হিজরিতে আশুরার দিনে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শহীদ হন মর্যাদাবান সাহাবি হযরত ইমাম হোসাইন (রা.), তার পরিবার ও সহচররা। আজ রোববার ৭ মহররম ১৪৪৬ হিজরি,১৪ জুলাই ২০২৪ ঈসাই।

রক্তাক্ত আশুরা!শোকাবহ আশুরা! আরবিতে ‘আশারা’ বাংলায় দশ। আশুরা অর্থ দশম। তাই ১০ মহররম আশুরা নামে পরিচিত।
আশুরা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও গুরুত্ববহ দিন। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরা পালিত হবে মহররমের ১০ তারিখে বা আশুরা দিবসে ঐতিহাসিক বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ ও স্মৃতিবহ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে আশুরার দিন বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে সমৃদ্ধ। তবে সর্বশেষ কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লুল্লাহ আলাইহিসসালাম এর দৌহিত্র হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এ মহররম মাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

পবিত্র আশুরা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত প্রেরণা জাগানিয়া একটি দিন। বলা বাহুল্য, পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলাম সবসময় সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তার আত্মত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগের মহিমা মুসলিম উম্মাহর এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। জুলুম-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং অসত্য ও অন্যায় প্রতিরোধে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর এ ভূমিকায় মানবজীবনের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.শাহাবুদ্দিন চপ্পু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পৃথক বাণী দিবেন। আশুরার মর্মবাণী ধারণ করে দেশ গড়ার আহ্বান জানাবেন।


   Page 1 of 25
     ইসলাম
আল্লাহর নাম ‘যুল জালালি ওয়াল ইকরাম’
.............................................................................................
মসজিদে শোরগোল নিয়ে রাসূল সা.-এর সতর্কবার্তা
.............................................................................................
অন্যায়ের সহযোগী না হতে আল্লাহর নির্দেশ
.............................................................................................
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)
.............................................................................................
অনুতপ্তকারীকে আল্লাহ ক্ষমা করেন
.............................................................................................
গুনায় রিজিক কমে
.............................................................................................
আজ পবিত্র আখেরি চাহার সোম্বা
.............................................................................................
নামাজ আদায়ের সময় দৃষ্টি কোথায় রাখবেন?
.............................................................................................
বন্যার সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
কবর জিয়ারতের সময় যে দোয়া পড়বেন
.............................................................................................
ইসলাম ন্যায় ও ইনসাফ শিক্ষা দেয়
.............................................................................................
নতুন সরকারের কাছে যে প্রত্যাশার কথা জানালেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
.............................................................................................
আজ পবিত্র আশুরা
.............................................................................................
ইরাকের কারবালা ইমাম হোসইনের রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস
.............................................................................................
ইরাকের কুফার পথে পরিবার পরিজনদের নিয়ে ইমাম হোসাইন (রা.)
.............................................................................................
হযরত ইমাম হোসাইনের রক্তে রঞ্জিত কারবালা প্রান্তর
.............................................................................................
ইরাকের কারবালায় এক হৃদয় বিদারক কাহিনী
.............................................................................................
আশুরার রোজা যেভাবে রাখবেন
.............................................................................................
রক্তাক্ত কারবালার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
.............................................................................................
১০ মহররম: কী ঘটেছিল সেদিন?
.............................................................................................
আশুরার দিনে সংঘটিত ২০ টি ঐতিহাসিক ঘটনালী
.............................................................................................
১৭ জুলাই পবিত্র আশুরা
.............................................................................................
হাত তুলে মোনাজাত করার বিধান
.............................................................................................
জান্নাত লাভের উপায় ঈমান ও নেক আমল
.............................................................................................
ইসলামে হালাল পশুর যেসব অংশ খাওয়া নিষিদ্ধ
.............................................................................................
ফজর থেকে তাকবিরে তাশরিক শুরু, পড়ার নিয়ম
.............................................................................................
লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক
.............................................................................................
হজের পাঁচ দিনের ধারাবাহিক কার্যাবলি
.............................................................................................
পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু আজ
.............................................................................................
ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ
.............................................................................................
ঈদুল আজহা কবে জানা যাবে শুক্রবার
.............................................................................................
জুমার দিন মুনাফিকের তালিকায় ওঠে যাদের নাম
.............................................................................................
ভাগ্যে যেখানে যার মৃত্যু লেখা
.............................................................................................
হজের মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি
.............................................................................................
জুমার দিন কেয়ামত সংঘটিত হবে
.............................................................................................
হারামাইনে আজ যারা জুমার নামাজ পড়াবেন
.............................................................................................
মেঝের তাপ থেকে বাঁচতে টুপির ওপর সিজদা করা যাবে?
.............................................................................................
তীব্র গরমে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তেন
.............................................................................................
দুনিয়ার বিপদ আল্লাহর পরীক্ষা
.............................................................................................
বিদায়ের প্রাক্কালে রোজাদারের কাছে রমজানের বারতা
.............................................................................................
তারাবির নামাজ ৩০ রোজা আমরা কিভাবে রমজানকে বিদায় জানাবো?
.............................................................................................
২৯ রমজানের রোজার ফজিলত “এক হাজার কবুল হজ্জের সাওয়াব প্রদান করা হয়
.............................................................................................
২৮ রমজানের রোজার ফজিলত জান্নাতের নেয়ামত দ্বিগুন করা হয়
.............................................................................................
পবিত্র লাইলাতুল কদর শনিবার
.............................................................................................
রমজানের ২৬ রোজার ফজিলত ৪০ বছর ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হয়
.............................................................................................
২৫ রমজান জুমআতুলবিদা কবরের শাস্তি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়
.............................................................................................
রোজাদারের যে কোন ২৪টি দোয়া কবুল করা হয়
.............................................................................................
রমজানের ২৩ তারিখের রোজার ফজিলত “জান্নাতে রোজাদারের জন্য একটি শহর নির্মান করা হয়
.............................................................................................
রমজানের ২২ তম রোজার ফজিলত : রোজ হাশরের ময়দানের সকল চিন্তা থেকে মুক্ত করা হয়
.............................................................................................
ইতেকাফে বসার নিয়ম প্রস্তুতি ও মাগফিরাতের বিদায় নাজাতের ১০ দিন শুরু
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: তাজুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়: ২১৯ ফকিরের ফুল (১ম লেন, ৩য় তলা), মতিঝিল, ঢাকা- ১০০০ থেকে প্রকাশিত । ফোন: ০২-৭১৯৩৮৭৮ মোবাইল: ০১৮৩৪৮৯৮৫০৪, ০১৭২০০৯০৫১৪
Web: www.dailyasiabani.com ই-মেইল: [email protected]
   All Right Reserved By www.dailyasiabani.com Dynamic Scale BD