মিয়া আবদুল হান্নান : এবার ব্যর্থ হলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণ জেগে উঠেছে, তারা চাপ তৈরি করছে। আর সেই চাপেই ক্ষমতাসীনদের নতিস্বীকার করতে হবে। অত্যন্ত দুঃসময় চলছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের এত খারাপ সময় এর আগে কখনও আসেনি। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশ গণতন্ত্রের খোলসে বাকশালী কায়দায় চলছে।
নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করে, শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে জনগণ হাসে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিগত সালের নির্বাচনের মতো সরকার আবারও নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। বিএনপির দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে উল্লেখ করে এ নেতা বলেন, এবার ব্যর্থ হলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকবে না। তাই আন্দোলনের বিকল্প নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, আমরা আঘাত করতে চাই না। তবে আমাদের ওপর আক্রমণ করা হলে এবার থেকে তা প্রতিহত করতে হবে।
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরাও তো সংলাপের কথা বলিনি। আমরা তো শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করব না। কারণ তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল বিএনপি। সেই প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ওই সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আর কোনো গ্রেফতার (বিএনপির কর্মীদের) করা হবে না, পুলিশি হয়রানি করা হবে না, গায়েবি মামলা করা হবে না। কিন্তু এর তিনদিন পর থেকে আমাদের প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। কার সঙ্গে সংলাপ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এতই যদি সাহস থাকে এবং উন্নয়ন করে থাকেন তাহলে এ মুহূর্তে পদত্যাগ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নতুন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে আমরা মাথা পেতে নেব। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার জন্য বলছি না, দেশটাকে বাঁচানোর দায়িত্ব শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নয়, বিশেষ করে আওয়ামী লীগেরও দায়িত্ব আছে। তারা কথায় কথায় বলে থাকেন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে তারা দেশ স্বাধীন করেছেন। ভারত থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ আমদানি জনস্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে সরকার যখন দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, এরই মধ্যে উন্মোচিত হলো আরও এক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী আদানি-বিপিডিবি চুক্তি। বিদ্যুৎ সেক্টরে দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বির্পযয়ে ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আদানি গ্রুপের সঙ্গে জনস্বার্থ বিরোধী বিদ্যুৎ আমদানি ও সব রেন্টাল চুক্তি বাতিলের দাবি জানান তিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল এর মাধ্যমে সরকার যখন দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বির্পযের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, এরই মধ্যে উন্মোচিত হল আরও এক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী আদানি- বিপিডিবি চুক্তি। সরকার ৫ নভেম্বর ২০১৭ সালে ভারতের আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেড এর সাথে ২৫ বছর মেয়াদি ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (কয়লা ভিত্তিক) ক্রয়ের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় আদানি পাওয়ারকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হবে ১,১৭,০৫৮ কোটি টাকা (১ ডলার = ১০৬.৩২ টাকা), যা দেশের কয়লাচালিত অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ এর তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। সরকার ৫ নভেম্বর ২০১৭ সালে ভারতের আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেডের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (কয়লাভিত্তিক) কেনার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তির আওতায় আদানি পাওয়ারকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হবে ১,১৭,০৫৮ কোটি টাকা, যা দেশের কয়লাচালিত অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, ক্রয়মূল্যের আরেক উপাদান জ্বালানির জন্য দেশের অন্যান্য কয়লাভিত্তিক জ্বালানিমূল্যের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি মূল্য দিতে হবে আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ কিনতে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব খরচসহ আদানি পাওয়ারে ব্যবহৃত প্রতি টন কয়লার মূল্য ধরা হয়েছে ২০০ ডলারের মতো। অথচ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আদানি পাওয়ারকে টনপ্রতি মূল্য দিতে হবে ৪০০ ডলার- অর্থাৎ দ্বিগুণ। আদানি পাওয়ার চুক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কয়লার এ চড়া দাম আদায় করতে চায়। আর সব মূল্যই পরিশোধ করতে হবে মার্কিন ডলারে, যা বর্তমান নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও তলানিতে নিয়ে ঠেকাবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্যাহ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনসহ বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দগন উপস্থিত ছিলেন।
|