নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন এমন নজির নেই বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ড. ইউনূসের বিন্দুমাত্র অবদান নেই। উল্টো মানুষকে নিঃস্ব করে দেওয়ার অজস্র রেকর্ড আছে। দেশের দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়ে কবে কার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এমন একটা নজিরও কেউ দেখাতে পারবে না।
শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট আয়োজিত সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। দেশ, উন্নয়ন, সরকার ও শান্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ড. ইউনূসের সঙ্গে কিসের অন্যায় হচ্ছে? এমন প্রশ্ন রেখে হানিফ বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। কোথায় কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন তার তদন্ত হচ্ছে। নোবেল বিজয়ী কি আইনের ঊর্ধ্বে? আমেরিকার এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন মামলা হয়েছিল। পরে জেলেও গিয়েছিলেন। আইন সব দেশে সবার জন্য সমান। রাষ্ট্রের প্রধান হোন আর নোবেল বিজয়ী হোন না কেন, অপরাধী হিসেবে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। ড. ইউনূস অন্যায় করেছেন। তাই গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ টেলিকম নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এটাকে হয়রানি বলার কোনো সুযোগ নেই। এই চিঠি ষড়যন্ত্রের আলামত।
সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, দুই দিন আগে সংবাদমাধ্যমে হঠাৎ দেখলাম বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে নিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। হিলারি ক্লিনটন, বান কি মুন সহ বিশ্বের ৪০ জন নেতার নামে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা এ চিঠি কাকে দিয়েছে? কারা দিয়েছে? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নাকি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই চিঠি বিজ্ঞাপন আকারে দেখতে হবে? নিউজ আকারে আসেনি কেন? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ওয়াশিংটন পোস্ট বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছে। আর আমাদের দেশে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার নিউজ করেছে। এসব দেখে ২০০৭ সালের কথা মনে পড়লো। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচারে মানুষ যখন রুষ্ট তখন আন্তর্জাতিক মহল বুঝতে পারলো নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সম্ভাববনা নেই। নতুন ফর্মুলা বের হলো। ড. ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হলো। আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু মনে হলো তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কিসের ওপর পেয়েছেন? শান্তিতে নোবেল দেয় যারা নরওয়ে সরকার। তারা আমেরিকার পক্ষ থেকে যে সুপারিশ করা তাকে এ নোবেল দেয়। ড. ইউনূস নোবেল পেলে মাইক্রোক্রেডিটের ওপর পাবেন, কিন্তু তিনি সেটা পাননি। রহস্য এখানেই।
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস এই চিঠির কথা বলে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ড. ইউনূস নিজে সাজিয়ে লিখে যাদের নামের কথা লেখা হয়েছে সেসব ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষা করতে চান।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে ৯০ লাখ নারী নাকি ঋণ নিয়েছেন। যারা ঋণ নিয়েছিল তাদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটেছে কি না জানা নেই। আমরা শুনেছি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলে পরে কিস্তি দিতে না পারায় মানুষের ঘরের টিন খুল নিয়ে গিয়েছে। ঝিনাইদহে ৩৭ জন আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে নিঃস্ব হয়ে ঢাকায় রিকশা চালান- এমন অসংখ্য নজির আছে।
ড. ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের টাকা দিয়ে নোবেল পুরস্কার কিনেছেন- এমন অভিযোগ করে হানিফ বলেন, গ্রামীণ টেলিকম নামে অলাভজনক কোম্পানি করে একটা টাকাও নাকি লাভ নেননি তিনি। এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। যখন গ্রামীণ টেলিকম তৈরি করা হয় তখন বলেছিলেন ২০ হাজার নারীকে শেয়ার দিয়েছেন। নরওয়ের টেলিনর কোম্পানির কাছে ৩৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিলেন বা দান করে দিলেন। হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন এসব কোথায়? সেই টাকার হিসাব দিতে হবে। এসব শেয়ারধারী নারীদের কত টাকা দিয়েছেন, প্রমাণ দেন।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে হানিফ বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কী করবেন। এসব না বলে ক্ষমতায় থাকতে কী করেছেন? সেটা বললে জাতি আপনাদের প্রতি আস্থা পেতো, জনগণ আশ্বস্ত হতো। অথচ এ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল বাংলাদেশের সবচেয়ে দুঃসময়, ক্রান্তিকাল ছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে দেশকে তারা কোথায় রেখে গিয়েছিল? সরকারের ভেতর সরকার ছিল। অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হাওয়া ভবনের তারেক রহমান। দুর্নীতি, সন্ত্রাস সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হতো। হাওয়া ভবনে কমিশন না দিয়ে কেউ কাজ পায়নি। আর এসব যাতে প্রচার, প্রকাশ না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে তারা হত্যা করে।
তিনি বলেন, বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের সৃষ্টি করেছে। দেশে ১২৫টি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল। এসব সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন হাওয়া ভবন থেকে তারা পরিচালিত হতেন। দেশের ৬৩টি জেলার ৫০০ স্থানে বোমা হামলা হয়েছে। আদালতে বোমা হামলায় ১২ আইনজীবী মারা গেছেন। এটাই ছিল তাদের আইনের শাসন।
হানিফ আরও বলেন, বিএনপি দেশকে অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল। আজে সেই অন্ধকার দেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন শেখ হাসিনা। ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতি পূরণ করেছেন। দেশের সব সেক্টরে উন্নতি হয়েছে। চরম দরিদ্র দেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত।
দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি বিএনপি-জামায়াতের পছন্দ হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। কারণ পাকিস্তান থেকে তাদের কলকাঠি নাড়া হয়। সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলন-আন্দোলন খেলা শেষ। এখন তারা ঝিমিয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচনের মাধ্যমে আর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। আর তারা এখন নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
দেশের আলেম সমাজকে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, আমরা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ নেই। মানুষ হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিতদের ইসলাম ধর্ম কখনো সমর্থন করে না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মানুষ হত্যা করলে শাস্তি পেতে হয়। যারা সন্ত্রাসী, মানুষ হত্যা করে তাদের বিষয়ে সঠিক তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সহ-সভাপতি নুরুল আক্তার, সফি উদ্দিন মোল্লা, গণতন্ত্রী পার্টির মহাসচিব ডা. শাহাদাত হোসেন, তৃণমূল বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আক্কাস আলী খান, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আল্লামা রুহুল আমিন খান, নেজামে ইসলাম বাংলাদেশ চেয়ারম্যান মাওলানা হারিসুল হক, ইসলামী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স মহাসচিব নুরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জুলকারনাইন ডালিম ও জামাল উদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাওলানা মনিরুজ্জামান রব্বানী।
|