আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় নোভা কাখোভকা বাঁধ গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই বাঁধ ধসে পড়ায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ সেখান থেকে পালিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ৮০টি শহর ও গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। খবর বিবিসির।
তিনি এই বাঁধ ধ্বংসের ঘটনায় রাশিয়াকে দায়ী করেছেন। এর ফলে দিনিপ্রো নদীর পানি বেড়ে গেছে এবং খেরসন শহরে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাশিয়া অবশ্য এই বাঁধ ধসে পড়ার কোনও দায় নিচ্ছে না। বরং, তারা বলছে, ইউক্রেনের গোলার আঘাতে এই বাঁধ ধসে পড়েছে। তবে ইউক্রেন বা রাশিয়া কারও দাবিই যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কাখোভকা বাঁধটি এই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই বাঁধ স্থানীয় কৃষক এবং বাসিন্দাদের পাশাপাশি জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি সরবরাহ করে। এটি রুশ-অধিকৃত ক্রিমিয়ার দক্ষিণেও পানি সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল। ডেপুটি প্রসিকিউটর-জেনারেল ভিক্টোরিয়া লিটভিনোভা ইউক্রেনীয় টেলিভিশনের এক ভাষণে বলেন, প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া দরকার।
কিয়েভের অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল ওই বাঁধটি রাশিয়া বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা বলছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী যেন দিনিপ্রো নদী পার হয়ে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা সামরিক আক্রমণ চালাতে না পারে সেজন্যই বাঁধটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এই বাঁধটি খেরসন অঞ্চলের নোভা কাখোভকা শহরে অবস্থিত। ওই শহরটি বর্তমানে রুশ সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানির স্রোত লোকালয়ের ভেতরে ঢুকছে।
বাঁধটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর পরই আশেপাশের এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় একজন সামরিক কর্মকর্তা বলছেন, খেরসন অঞ্চলের অন্তত আটটি বসতি ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস বলছে, নোভা কাখভকা শহরটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মস্কো-সমর্থিত স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে তাস আরো বলছে যে সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলছেন, বন্যার হাত থেকে লোকজনকে উদ্ধারের জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনি ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলছেন ভোর রাত স্থানীয় সময় ২টা ৫০মিনিটে এই জলবিদ্যুৎ বাঁধটি উড়িয়ে দেওয়া হয়। তার আশঙ্কা এর ফলে ৮০টির মতো শহর ও গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, তার সরকার ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগ “লোকজনকে রক্ষায় যা কিছু করা সম্ভব তার সবই করছে” এবং যারা “বিপদজনক এলাকায়” অবস্থান করছে তাদেরকে যতো দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমা প্রতিরক্ষা জোট নেটোর প্রধান ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ। নেটোর মহাসচিব বলেন এই বাঁধ ধ্বংস করা থেকে “ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বর্বরতা” সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এক টুইট বার্তায় তিনি বলছেন এর ফলে হাজার হাজার বেসামরিক লোকজন হুমকির মুখে পড়েছে এবং এর ফলে পরিবেশেরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান চার্লস মিশেল বাঁধ ভাঙার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছেন। তিনি বলছেন, এধরনের একটি বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা “যুদ্ধাপরাধ।”
হুমকির মুখে জাপোরিশা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এই বাঁধের সাহায্যে তৈরি জলাধারের পানি রাশিয়ার দখলিত ক্রাইমিয়ায় সরবরাহ করা হয়। এই পানি ব্যবহার করা হয় জাপোরিশার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও যা এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এক বিবৃতিতে বলেছেন নোভা কাখভকা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে জলাধারের পানির স্তর প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ সেন্টিমিটার করে হ্রাস পাচ্ছে।
তিনি বলছেন স্থানীয় সময় সকাল আটটায় পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৪ মিটার। এই উচ্চতা ১২.৭ মিটারের নিচে নেমে গেলে সেখান থেকে পানি পাম্প করা যাবে না।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে অপরিহার্য নয় এমন সব ধরনের কাজের পানির ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলছেন, পরমাণু-বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে শীতল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়া গেলে এর জরুরি জেনারেটর চালু রাখা বিঘ্নিত হতে পারে।
“অতিরিক্ত সময় ধরে শীতল রাখার পানির অভাব হলে জ্বালানি রডগুলো গলে যেতে পারে, তখন ডিজেল জেনারেটরগুলো কাজ করবে না,” বলেন মি. গ্রোসি।
তবে তিনি বলছেন, এখনই তারা এধরনের কোনো হুমকির আশঙ্কা করছেন না। কারণ এই কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জলের বিকল্প উৎস রয়েছে।
|